জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২১ নং হলের একটি কক্ষে (পূর্বের শেখ রাসেল হল) বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের ৫৪তম ব্যাচের (২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের) শিক্ষার্থীদের ‘অন্ধকারে দাঁড় করিয়ে’ মানসিক নিপীড়ন এর অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের ৫৩তম ব্যাচের (২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের) শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে।
রবিবার (১২ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নং হলের ৪০৩ নং রুমে নিপীড়নের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও হল সংসদ প্রতিনিধিরা।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের প্রথমে রফিক-জব্বার চত্বরে ডাকা হয়। পরে তাদের ২১ নং হলের ৪০৩ নম্বর কক্ষে যেতে বলা হয়। সেখানে ৫৪তম ব্যাচের ২০ জন শিক্ষার্থী উপস্থিত হন।
আরও জানা যায়, কক্ষে প্রবেশের পর নবীনদের দুই সারিতে দাঁড় করানো হয়। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ করে রাখতে বলা হয় এবং কক্ষের দরজা ও জানালাসহ সব আলো নিভিয়ে রাখা হয়। প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিট অন্ধকার রুমে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় শিক্ষার্থীদের। এ সময় তাদের বিভিন্ন নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলা সম্পর্কিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়।
র্যাগিং এর সাথে যুক্ত ৫৩তম ব্যাচের শনাক্তকৃত শিক্ষার্থীরা হলেন— সাইদ, তানভীর রহমান মুন, আব্দুল্লাহ আল ফাহাদ, আবু তালহা রনি, রাজিব শেখ, ইয়ামিন খান হৃদয়, আবু সাইদ, জান্নাতুল আদন, আহমেদ আরেফিন রাতুল, রেজওয়ান ইসলাম রিফাত, তাসনিমুল হাসান জুবায়ের, রুম্মান, রাকিবুল হাসান নিবিড়, জাহিদুল ইসলাম এবং উশান্ত ত্রিপুরা।
একজন নবীন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা সবাই ভয় পেয়েছিলাম। দরজা বন্ধ, লাইট বন্ধ, সবাইকে সেনাবাহিনীর ট্রেনিংয়ের মতো দুই সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই হঠাৎ কয়েকজন বড় ভাই রুমে ঢুকে লাইট অন করেন।”
৫৩তম ব্যাচের অভিযুক্ত শিক্ষার্থীরা নিপীড়নের ঘটনা অস্বীকার করেছে। তারা বলছেন- নবীনবরণ অনুষ্ঠানের আলোচনার জন্য জুনিয়রদের ডাকা হয়েছিল। গরমের কারণে আলো নেভানো ছিল এবং পাশের কক্ষে পরীক্ষার্থী থাকায় শব্দ এড়াতে দরজা-জানালা বন্ধ রাখা হয়েছিল।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে তানভীর জামান মুন বলেন, আমরা কাউকে র্যাগ দেইনি। এখানে সেরকম কোন ঘটনা ঘটেনি। পরীক্ষার কারণে আমরা নবীন বরণ অনুষ্ঠান করতে পারিনি। তাই আলোচনার জন্য তাদের ডেকেছিলাম।
তবে অভিযোগের বিষয়ে ২১ নং হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন বলেন, আমরা হল সংসদের প্রতিনিধি, কিছু শিক্ষার্থী এবং হলের কয়েকজন স্টাফসহ তাদের হাতেনাতে ধরেছি। তাদের তথ্য সংগ্রহ করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করার হয়েছে। অভিযুক্তদের তিনজন এই হলের বাকিরা অন্য হলের। এরকম কার্যক্রম বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃংখলা পরিপন্থী একটি কাজ। আমরা বিস্তারিত যাচাই করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর আবেদন করবো।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে আর কখনো যেন এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেদিকেও খেয়াল রাখা হবে। কেউ যদি এইরকম কাজ পুনরায় করতে উদ্ধত হয় তাহলে প্রশাসন বরাবর সর্বোচ্চ শাস্তির আবেদন করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ঘটনাটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমরা হল প্রশাসনকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা বিষয়টির সত্যতা যাচাই করছে। তারা বিষয়টি তদন্ত করে আমাদের কাছে প্রতিবেদন জমা দিলেই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। আমাদের শতভাগ প্রস্তুতি আছে।



















