বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক বলেছেন, ‘নামের সার্থকতা রক্ষা করতে না পারলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম বদলে ফেলুন। গোটা দেশের ইয়াং জেনারেশন একটি ইসলামী সমাজ গড়ার জন্য নিজেদের সর্বোচ্চ ত্যাগও কোরবানি করার জন্য প্রস্তুত। আপনারা যারা বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা করছেন, বিশেষত বাংলাদেশের একমাত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় যার কপাল জুড়ে ইসলাম রয়েছে, যার নাম হল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। কাজেই, সেই ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় যদি ইসলামকে বিজয়ী করবার ক্ষেত্রে ভূমিকা না রাখতে পারে, নাম পাল্টিয়ে ফেলেন। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, এটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।,
সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর দুইটায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বটতলায় খেলাফত মজলিস, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক আয়োজিত ‘জুলাই পরবর্তী করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
এসময় তিনি আরও বলেন, জুলাইয়ে বিপ্লবে ছাত্ররা টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল এখানেই শেখ হাসিনা পরাজিত হয়েছে। যে রাজপথে তারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই সেই রাজপথকেই তারা জায়নামাজ বানিয়ে আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে পড়েছে। পাঁচে আগস্ট যখন বিপ্লব সাধিত হল তারপরের দুই তিন ঘন্টায় টেকনাফ থেকে তেতুলিয়ায় কোন ভাস্কর্য নামক মূর্তি অবশিষ্ট ছিল না, কিন্তু লক্ষ্য করেছেন কোন মন্দিরে কোন প্রতিমায় একটা ফুলের টোকাও দেয়া হয়নি। এটাই ছিল অসাম্প্রদায়িক বিপ্লব। এটা ছিল আগস্ট বিপ্লবের চেতনা। এই চেতনাকে আমাদের ধারণ করতে হবে। মেডিকেল কলেজে যেমন ডাক্তারি পড়ানো হয়, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে যেমন প্রকৌশল বিদ্যায় পড়ানো হয় ঠিক তেমনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আগাগোড়া সব জায়গায় ইসলামকে ধারণ করা চায়। যদি ইসলামকে ধারণা করা যায় তাহলে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নামের সার্থকতা থাকেনা। প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এখানে যে যে সাবজেক্টেই পড়ুক, প্রত্যেকের জন্য একটা কম্পোলসারি ইসলাম শিক্ষার ব্যবস্থা যেন থাকে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এর একজন শিক্ষার্থীএখান থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পরে আর পাঁচটা জেনারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মত ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ যেন না থাকে।
আলেমদের নির্যাতিত হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফ্যাসিবাদের শাসনামলে যারা দেশে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে । নির্যাতনের পেছনে চরিত্র হরণ করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। আমরা আওয়ামী লীগকে ক্ষমা করলেও আল্লাহ তাদের ক্ষমা করবেন না। আমরা শিক্ষার্থীদের জীবনের বিনিময়ে আজ বৈষম্যহীন রাষ্ট্র পেয়েছি। বিগত ১৬ বছর দেশে অনেক অন্যায় জুলুম হয়েছে। মানুষকে গুম করা হয়েছে। মানুষ গুমের শিকার হলে পরিবারে কী ভয়াবহ প্রভাব পড়ে তা পরিবারই জানে। আমরা সেই গুমের রাজ্যে আর কোনোদিন ফিরে যেতে চাই না। ’
ইসলামিক স্কলার আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন বলেন, আজকে আমাদের মধ্যে যেই সিংহ পুরুষ বসে আছে তার এহেন উপস্থিতি কল্পনাও ছিল না যদি জুলাই বিপ্লব সংঘটিত না হতো। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন ”এই হক বাতিলের উপর আঘাত করবে, তবে এই আঘাত অন্য কোথাও নয় এই আঘাত চারিত্রিক।’ আপনার চেতনা, আদর্শ আর নৈতিকতা দিয়ে যদি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে পরিবর্তন করতে হবে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামকে বিশ্ব মাঝে সমুন্নত করার যে লক্ষ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো, সেই লক্ষ্যপানে যাত্রা করবে এটাই দাবি আমাদের।
ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লব সাধিত না হলে আজকে আমি আমার এ জায়গায় আসতে পারতাম না। আর এই দেশকে একদিনে পরিবর্তন করা সম্ভব না। ১৬ বছরে যা করেছে তা পরিবর্তন করা কষ্টসাধ্য। সময় নিয়ে রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা ফ্যাসিবাদি সিস্টেমকে সমূলে উৎখাত করতে হবে। ’
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম, ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আ ব ম ছিদ্দিকুর রহমান আশ্রাফী, শাখা ছাত্রশিবির সভাপতি মাহমুদুল হাসান, ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এম সুইট, বাংলাদেশ জমিয়তে তালাবায়ে আরাবিয়ার সেক্রেটারি সাজ্জাতুল্লাহ শেখ, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন রাহাত এবং অন্যান্য সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
