জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মাহমুদুল হাসান রিজভীর স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) সংসদের উদ্যোগে আলোকচিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে প্রাচীন বাংলার জনপদ, ব্রিটিশ আমলের বাংলার ইতিহাস, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪-এর জুলাই আন্দোলনের আলোকচিত্র স্থান পেয়েছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় এই আয়োজন করে সংগঠনটি। পরে সেখানে উন্মুক্ত কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
আলোকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাংগীর আলম, প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহীনুজ্জামান এবং পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. নওয়াব আলী। এসময় সংগঠনটির সভাপতি মাহমুদুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক নুর আলম, সহ সভাপতি ওবাইদুর রহমান আনাস ও সাদিয়া মাহমুদ মিমসহ অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দর্শনার্থীরা প্রদর্শিত চিত্র দেখে তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ এবং এগুলো ইতিহাসের অংশ হিসেবে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান।
প্রদর্শনী সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি’র সমন্বয় এস এম সুইট বলেন, এখানে ২৪ এর ইতিহাস যেমন স্থান পেয়েছে তেমনি আমাদের পরম্পরা ইতিহাস যেমন ৫২এর ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান থেকে ৭১ এর ইতিহাস। আমি মনে করি এরকম আয়োজন প্রতিটি ছাত্র সংগঠনেরই করা দরকার। এতে করে দীর্ঘদিন ধরে আমরা যে ভুল ইতিহাস জেনে আসছি সেই জায়গা থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারবো এবং আগামী প্রজন্মকে সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞাত করতে পারবো।
তিনি আরো বলেন ”আমি মনে করি প্রশাসনের এ ধরনের আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করা উচিত, এতদিন যে ইতিহাস কে তুলে ধরা হয়েছে তা একপাক্ষিক ইতিহাস। আমরা যদি বাংলাদেশের জন্মের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাই এবং নতুন প্রজন্মকে জানাতে চাই তাহলে এ ধরনের আয়োজন আরো বেশি হওয়া প্রয়োজন।”
আলোকচিত্র পরিদর্শন শেষে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, ছাত্র ইউনিয়ন চমৎকার এক আয়োজন করেছে। যেখানে তারা আকর্ষণীয় ও দুর্লভ কিছু ছবি প্রদর্শন করেছে। সেখানে আমি ৪৭ এর পূর্বেরও কিছু আলোকচিত্র দেখেছি। পরে ৫২ ভাষা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা ও স্বাধীনতা আন্দোলন এবং সর্বশেষ ২৪শের জুলাই বিপ্লবের যে ছবিগুলো আনা হয়েছে সেসব খুবই আকর্ষনীয়। তবে তারা ৯০ এর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের চিত্রগুলো হয়তো সংগ্রহে আনতে পারে নি। জুলাই বিপ্লবের বেশ কয়েকটা ছবি আমি দেখেছি সেসব খুবই মর্মান্তিক। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে ফ্যাসিস্ট কায়েম হয়েছিলো, ছাত্র-জনতার উপর যে অকথ্য নির্যাতন করেছিলো সেই অত্যাচারের ছবিগুলো এখানে স্হান পেয়েছে। তাদের বেশ কয়েকটি ইভেন্ট এখনো বাকি আছে, তারপরেও আমি বলবো তাদের এই উদ্যোগটি ব্যতিক্রম এবং একটি মহৎ উদ্যোগ। ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তরভাবে তথ্য বহুল ও গোছালো আলোকচিত্র প্রদর্শন করতে পারে সেই প্রত্যাশা রাখি।
উল্লেখ্য, জুলাই-গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ১৮ জুলাই মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মাহমুদুল হাসান রিজভী। তিনি নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার চরকিং ইউনিয়নের মৌলভী তোফাজ্জল হোসেনের বাড়ির জামাল উদ্দিনের ছেলে। তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন উত্তরা থানা শাখার সদস্য ছিলেন।
