কয়েক দিন ধরে আলোচনার পর প্রদান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে অবশেষে মুখ খুললেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন। তিনি জানালেন, ‘এটা ছিল সৌজন্য সাক্ষাৎ।’
মঙ্গলবার (১ জুলাই) নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে বৈঠকের বিষয়টি খোলাসা করে এ কথা জানান সিইসি।
তিনি বলেন, ‘ওভাবে ফরমালি কোনো বৈঠক করি না। তবে নির্বাচনের কোনো তারিখ বা তফসিল নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি।’
এর আগে গত ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেন সিইসি নাসির উদ্দিন। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। যা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনার ঝড় ওঠে। কী কথা হলো বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সিইসির? এমন কৌতূহল জাগে সব শ্রেণির মানুষের মনে।
ওই বৈঠকের বিষয়টি এর আগে খোলাসা করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনিও জানান, ওটা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সিইসির সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। কয়েক দিন বাদে সিইসিও জানালেন একই কথা।
আগামী নির্বাচনের তারিখ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘না, এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। নির্বাচনের তারিখ এবং শিডিউল আপনারা যথাসময় জানতে পারবেন। এটা একটু অপেক্ষা করতে হবে।’
ওই বৈঠকের পরই গুঞ্জন উঠে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হতে পারে। কারণ এর আগে ১৩ জুন লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা জানান, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ২০২৬ সালের রমজানের আগের সপ্তাহে (ফেব্রুয়ারি) নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। সেই ঘোষণার পর সিইসির সঙ্গে এটিই ছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রথম বৈঠক।
সিইসি বলেন, ‘ওটা সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসতে পারে নির্বাচন নিয়ে আলাপ হয়েছে কি না। উনি (ড. ইউনূস) প্রধান উপদেষ্টা এবং এই মুহূর্তে ইলেকশনটা আলোচনার কেন্দ্রে। ফলে এটি নিয়ে আলোচনা হবেই।’
সিইসি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই উনি (প্রধান উপদেষ্টা) জানতে চেয়েছেন, একটা ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে দিতে আমাদের প্রস্তুতি আছে কি না? আমরা বলেছি, প্রস্তুতি ফুল গিয়ারে নিচ্ছি। গাড়ির যে চারটা গিয়ার থাকে, চারটা ফুল করেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। আপনারা দেখছেন নানাবিধ চ্যালেঞ্জের মধ্যেই কিন্তু আমরা প্রস্তুতি নিয়ে যাচ্ছি।’
ইসি এবং অন্তর্বর্তী সরকার সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে একই তরঙ্গে রয়েছে মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘একটা সুবিধা হয়েছে যে, আমাদের ওয়েভলেন্থটা মিলে গেছে। অ্যাটলিস্ট নির্বাচনটাকে গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ করার জন্য আমরা এখন একই ওয়েভলেন্থে আছি। উনি পরিষ্কার ভাষায় বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছেন এবং ওনার যে নির্দেশনা আমরা যেটা বুঝতে পারি, একটা নিউট্রাল ফ্রি ফেয়ার ক্রেডিবল ইলেকশন জাতিকে উপহার দিতে চান।’
স্থানীয় নয় জাতীয় নির্বাচনই মূল ফোকাস
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে যে বিতর্ক চলছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সিইসি সাফ জানান, ‘প্রধান উপদেষ্টা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে তো কিছু বলছেন না। তিনি জাতীয় নির্বাচনের কথাই বলে যাচ্ছেন। উনি জাতিকে যে ওয়াদা দিচ্ছেন, দেশে-বিদেশে যে কথা বলছেন তা হলো, জাতীয় নির্বাচন। আমরা তার কমিটমেন্টের প্রস্তুতিতেই এগোচ্ছি। আমাদের মূল ফোকাস জাতীয় নির্বাচন।’
প্রধান উপদেষ্টা সাক্ষাতে ডেকেছিলেন নাকি সিইসি সময় চেয়েছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর উনার সঙ্গে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক করিনি। আমি দেখা করতে চাইলাম, উনি বললেন ওকে।’
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘লন্ডনে ফেব্রুয়ারির কথা এসেছে, এপ্রিলের কথা এসেছে, ওই দুইটা টাইমফ্রেমকে নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি এগোচ্ছে।’
ইসি পুর্নগঠনে মন্তব্য নয়
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন নিয়ে এনসিপির দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সিইসি বলেন, ‘আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত দিতে পারে। কিন্তু আমি একজন অথরিটি হিসেবে কোনো বক্তব্য দিতে চাই না।’
গণমাধ্যমে ইসি পুর্নগঠনের বার্তা দেওয়া হয়েছে বলে খবর প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো বার্তা, আলোচনা, নির্দেশনা আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। আমাদেরকে কেউ কিছু বলেনি।’
সিইসির প্রশ্ন, ‘আমরা কি কারও পক্ষ নিয়ে কাজ করছি? আমরা কি চেয়ারে জোর করে বসেছি?’ তিনি বলেন, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে একটি সিলেকশন প্রসেসের মাধ্যমে এসেছি। আমরা উড়ে এসে জুড়ে বসি নাই। আমরা ৫ আগস্টের বিপ্লবের ফসল।’
