হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাসে কথা কাটাকাটির জেরে শিক্ষার্থীদের দুইটি পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। উক্ত ঘটনায় ছুরিকাঘাতের অভিযোগ উঠে শিবিরের শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান হল (জিয়া হল) সভাপতি ফিজিস্ক বিভাগের ১৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী।
রবিবার (২০ অক্টোবর) সন্ধ্যার বাসে শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসার পর এ ঘটনা ঘটে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে রাতেই অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা যায়, রবিবার সন্ধ্যায় শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসার পথে বাসের মধ্যে হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত আনসারুল নামের এক শিক্ষার্থী জুনিয়র কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আস্তে কথা বলতে বলেন। এতে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর বাস ক্যাম্পাসে আসলে বাস থেকে নামার পর দুই পক্ষের মধ্যে আবারও কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ সময় আনসারুলের বিপক্ষে ছুরিকাঘাতে আহত করার অভিযোগ তোলেন ভুক্তভোগী ৪ শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী তাজউদ্দীন হলের (বর্তমান শহীদ আবরার ফাহাদ হল) শিক্ষার্থী তানভীর অভিযোগ করে বলেন, আমরা বন্ধুরা মিলে রাত ৯ টার বাসে শহর থেকে ক্যাম্পাসে আসছিলাম। বাসেই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৯ ব্যাচের আনসারুল ভাই আমাকে মারার তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। পরে বাস থেকে নেমে আমাকে আবার পিছন ডেকে পকেট থেকে ছুরি বের করে বাম হাতে কব্জি বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করে। এসময় আমার বন্ধু রাশেদ, দূর্জয় সহ ৭/৮ জন এগিয়ে আসে আমাকে নিয়ে যায়। উদ্ধার করতে গিয়ে ছুরিকাঘাতের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন একই হলের ফিজিক্স ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী রাশেদ, এগ্রিকালচার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী দূর্জয়, একাউন্টিং ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থী জয়।
উক্ত বাসে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী জানান, বাসে সিনিয়র জুনিয়র কথা কাটাকাটির জের ধরে জুনিয়র ২২ ব্যাচের তাজউদ্দীন হলের (বর্তমান শহীদ আবরার ফাহাদ হল) শিক্ষার্থী ফোন দিয়ে হলের বড় ভাই ছোট ভাই বন্ধুদের ডাকে। বাসেয় সব মিটমাট করে নিলেও ক্যাম্পাসে পৌঁছায় বাস থেকে নামার পর তাজউদ্দীন হলের (বর্তমান শহীদ আবরার ফাহাদ হল) শিক্ষার্থীরা সিনিয়র ভাইকে ঘিরে ধরে এবং ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। পরে জানতে পারি সিনিয়র ভাই ১৯ ব্যাচের আনসারুল ভাই। আমি বাসে এবং নামার সময় আনসারুল ভাইয়ের হাতে কোনো ধরনের ধারালো অস্ত্র বা ছুরি দেখতে পাই নি। তিনি তো টিউশনি পড়ায়তে গেছিলাম, ছুরি বা ধারালো জিনিস নিয়ে কেন যাবেন। উভয় পক্ষের মধ্যে ধাক্কা ধাক্কি হাতাহাতি হয় এক্ষেত্রে আহত হতে পারে।
উক্ত ঘটনার পর উপস্থিত শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রক্টর প্রফেসর ড. শামসুজ্জোহা এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক প্রফেসর ড. এস. এম. এমদাদুল হাসান অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে।
এছাড়াও তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
ঘটনাস্থলে ধারালো জিনিস বা ছুরি পাওয়ার বিষয়ে প্রক্টর প্রফেসর ড. শামসুজ্জোহা বলেন, ঘটনাস্থলে ও অভিযুক্তের কাছে কোনো ধারালো অস্ত্র বা ছুরি পাওয়া যায় নি। ওই সময় মবকে কন্ট্রোল করার জন্য তাৎক্ষণিক তদন্ত ছাড়াই সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে হাবিপ্রবি শিবিরের নেতৃবৃন্দ গেলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে যায় পরে শিবির ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এসময় অভিযুক্ত আনসারুলের সাথে শিবিরের আরেক নেতা মুহিতকে আটকে রাখে এবং পরবর্তী পুলিশের হাতে সোপর্দ করে বলে জানা যায়।
এ বিষয়ে হাবিপ্রবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি রেজওয়ানুল হক বলেন, জুলাই গনঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ক্যাম্পাসে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি কোনোভাবে কাম্য নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে উচ্চস্বরে কথা বলাকে কেন্দ্র যে ঘটনা ঘটেছে সেটি একান্তই সিনিয়র জুনিয়র কথা কাটাকাটির জের ধরে সৃষ্টি। ঘটনা শুরুর কিছুক্ষণ পর সংবাদ পেয়ে আমরা হাবিপ্রবি শাখা ছাত্রশিবিরের কয়েকজন দায়িত্বশীল ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করি এবং আমাদের অবস্থান ক্লিয়ার করি- ছাত্রশিবির কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেয়না।
এই ঘটনায় যেই দোষী হোক, তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো। সেই সাথে শিক্ষার্থীদেরকে প্রশাসন আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে অনুরোধ করি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আসার সাথে সাথে, তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবি জানিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করি। কিন্তু এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার দায় ছাত্রশিবিরের উপর চাপিয়ে দিয়ে ঘৃণ্য রাজিস্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা করছে ছাত্রদল ও একটি মহল। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেই সাথে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছি, উক্ত ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত অপরাধীকে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।
















