সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি (প্রস্তাবিত) চূড়ান্ত অধ্যাদেশ জারির দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার করার ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কোনো অগ্রগতি না পাওয়ায় পরিচয় সংকট ও একাডেমিক অনিশ্চয়তায় ভুগছেন দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী। তাই অধ্যাদেশ না পাওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক অবরোধ, অবস্থান ও ঘেরাওসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় শিক্ষা ভবনের সামনে এ কর্মসূচি জানান শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রকাশ করলেও চূড়ান্ত অধ্যাদেশের অগ্রগতি দীর্ঘদিন ধরে থেমে আছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচয় সংকট, একাডেমিক অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন। জনদুর্ভোগ এড়ানোর জন্য সড়ক ছাড়িয়ে শিক্ষা ভবনের পাশে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন কর্মসূচি চালাচ্ছেন তারা। তবে দাবি আদায় না হলে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) আবারও সড়ক অবরোধসহ ব্লকেড কর্মসূচি পালন করবেন।
সরেজমিনে, অবস্থান কর্মসূচি থেকে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের ২০২৪–২৫ সেশনের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মুসা আহম্মেদ জিহান বলেন, আমরা আজ অধ্যাদেশ নিয়ে ঘরে ফিরব। কোনো ধরনের কালক্ষেপণ চলবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
সরকারি বাংলা কলেজের ২০২০–২১ সেশনের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শুভ্রত শীল বলেন,
অধ্যাদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না। আমরা বারবার রাস্তায় নামতে চাই না। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি—অধ্যাদেশ প্রকাশ করুন।
ঢাকা কলেজের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী নাইম হাওলাদার বলেন, এক দফা দাবিতে আমরা শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। দেরি না করে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি করা না হলে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকার সাতটি পয়েন্টে অবরোধ কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। আমরা চাই না জনভোগান্তি হোক, তাই সরকার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিক।
অন্যদিকে বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইমু তরফদার জানান, আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলবে। প্রয়োজনে আমরা অনশনেও যাব। রাতেও অবস্থান করার জন্য আমরা প্রস্তুত।
এ ছাড়া ইডেন কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফা আরা মিম বলেন,
আমরা আর কোনো আশ্বাসে বিশ্বাস করি না। আজই অধ্যাদেশ চাই। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ইউশা বিন আলম জানান আমরা শিক্ষার্থীরা ঘরে ফিরে পড়ার টেবিলে বসতে চাই। তাই সরকারের নিকট আমরা দাবি জানাচ্ছি অতি দ্রুত অধ্যাদেশ জারির সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করে তা ঘোষণা দেওয়ার বন্দবস্ত করুন।
এসময় শিক্ষার্থীদের স্লোগান ও অবস্থান কর্মসূচিতে পুরো শিক্ষা ভবন এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সতর্ক অবস্থানে ছিল।
দুপুর ১টার দিকে তারা শিক্ষা ভবন ঘেরাও করতে গেলে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। পরে তারা ভবনের সামনের সড়ক অবরোধ করে ব্লকেড কর্মসূচি চালান। এতে হাইকোর্টের মাজার রোড, সচিবালয়ের সামনের সড়কসহ আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবি—ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির চূড়ান্ত অধ্যাদেশ দ্রুত জারি করতে হবে।
উল্লেখ্য এর আগে গত ১২ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ বিভাগ জানায়, সাত কলেজকে একীভূত করে ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গুজব এড়িয়ে দায়িত্বশীল আচরণের আহ্বান জানানো হয়।





















