‘উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে’ চাপিয়ে অ্যাকাডেমিক অর্ডিন্যান্স (অধ্যাদেশ) লঙ্ঘন করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ইংরেজি বিভাগে স্নাতক ফলাফল প্রদান করা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শতাধিক শিক্ষার্থী। বিভাগের অর্ডিন্যান্স লঙ্ঘন, মানোন্নয়ন পরীক্ষা না নেওয়া এবং ক্রেডিট বণ্টনে ভুলের কারণে শিক্ষার্থীরা তাদের ন্যায্য অ্যাকাডেমিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেস কর্নারে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। তৎকালীন দুই বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. মোছা : সালমা সুলতানা ও অধ্যাপক ড. মিয়া মো: রাশেদুজ্জামানের অবহেলায় এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন তারা।
এসময় তারা অভিযোগ করেন, বিভাগের তৎকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. সালমা সুলতানা ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ক্রেডিট বণ্টনে ভুল করেন। নতুন অর্ডিন্যান্সে যেখানে মোট ১৩৬ ক্রেডিটের কথা ছিল, সেখানে ১২৪ ক্রেডিট হিসাব ধরে চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়। যা ২০১৯ সালে প্রকাশিত নতুন অর্ডিন্যান্স ভঙ্গের শামিল। সেই ভুল ঢাকতে বিভাগীয়ভাবে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অর্ডিন্যান্স অনুসরণ করে ফল প্রকাশ করা হয়, যা অর্ডিন্যান্সকে ভঙ্গ করে।
তারা বলেন, ড. সালমা সুলতানার পর দায়িত্বে আসা সভাপতি ড. মিয়া মো: রাশেদুজ্জামান ৩য় বর্ষ থেকে মানোন্নয়ন পরীক্ষা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করেন। পরবর্তীতে স্নাতক শেষ করে মানোন্নয়ন পরীক্ষা নেওয়ার কথা থাকলেও অর্ডিন্যান্স ভঙ্গের কারণে এখন সেটি তারা দিতে পারছে না। এতে করে তাদের ক্রেডিট পূর্ণ করতে ও মানোন্নয়ন পরীক্ষা দিতে জটিলতা তৈরি হয়েছে। তারা দাবি জানান, এই সপ্তাহের মধ্যেই যেন তাদের মানোন্নয়ন পরীক্ষার গ্রহণ করা হয়।
জানা যায়, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের অর্ডিন্যান্স ৮.১ ধারা অনুযায়ী মোট ক্রেডিট হওয়ার কথা ১৩৬ ক্রেডিট। কিন্তু তৎকালীন বিভাগীয় সভাপতি অধ্যাপক ড. সালমা সুলতানার দায়িত্বে অবহেলায় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অর্ডিন্যান্স ৬.১ ধারা অনুযায়ী করে ১২৮ ক্রেডিট-এর ভিত্তিতে কোর্স বণ্টন করা হয়। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ক্রেডিটসহ তাদের ফল প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ব স্ব অনুষদের অ্যাকাডেমিক অর্ডিন্যান্সের অভিন্ন মৌলিক বিষয়গুলোর নীতি অনুযায়ী, চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর কোনো শিক্ষার্থী সিজিপিএ-৩.০০ এর কম পেলে ক্রেডিট পূর্ণ বা মানোন্নয়নের আবেদন করতে পারবে। যদি কোনো শিক্ষার্থী ১ম থেকে ৪র্থ বর্ষ পর্যন্ত কোনো কোর্সে সিজিপিএ-৩.০০ এর কম পেয়েছে, তারা ফল প্রকাশের ১৫ দিনের মধ্যে মানোন্নয়নের আবেদন করতে পারবে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আব্দুর রহমান বলেন, আমরা মানোন্নয়ন পরীক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়ে প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে তারা অ্যাকাডেমিক অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। আমরা এই সপ্তাহের মধ্যেই যথাযথ নিয়ম মেনে মানোন্নয়ন পরীক্ষার অনুমতি চাই।
এ বিষয়ে বিভাগের বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ বলেন, এটা ভুল ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট সমাধানে সুপারিশ জানিয়েছি। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও উপাচার্যের সুপারিশ হলে পরীক্ষা গ্রহণ করতে বাধা নেই।
দেশের বাইরে থাকায় অধ্যাপক ড. সালমা সুলতানার মুঠোফোনে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. মিয়া মো: রাশেদুজ্জামান বলেন, মানোন্নয়নের আবেদনসহ আমিও ভিসি অফিসে গিয়েছিলাম। পরবর্তীতে সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসেনি। আমরা সদয় সহানুভূতি দেখাতে অনুরোধ করেছিলাম প্রশাসনকে।
এ বিষয়ে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কল্যাণ বিবেচনা করে উপাচার্য মহোদয়ের কাছ থেকে ওই ফলাফল প্রকাশের জন্য অনুমোদন নেওয়া হয়। পরবর্তীতে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে সেটির জন্যও সুপারিশ করেছি। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হোক এটা কখনোই আমরা কামনা করি না।
এ বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. ওয়ালিউর রহমান বলেন, ওরা মানোন্নয়ন চাইছে। তাদের মানোন্নয়নের ব্যাপারে একটু প্রবলেম হয়েছে। মানোন্নয়নের পরীক্ষা অর্ডিন্যান্সের সাথে সাংঘর্ষিক আছে। এছাড়া হয়ত আগের কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি আছে। এ ব্যাপারটা নিয়ে আমরা ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে বসবো। পরীক্ষা কমিটির সঙ্গে কথা বলবো। তারপর ডিসিশন বা সংশোধন জানানো যাবে।
এ বিষয়ে বিধি মোতাবেক সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ।



















