ফেসবুকে আওয়ামী প্রচারণাকে কেন্দ্র ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের রোষানলে পড়েন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) এক আওয়ামীপন্থী শিক্ষক।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের ৩য় তলায় (ইবি) ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের কেন্দ্রীয় ভর্তিকমিটির মিটিংয়ে অংশ নিতে ক্যাম্পাসে এলে এ ঘটনার সম্মুখীন হন হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলাম।
জানা যায়, ভর্তি কমিটির সভায় অংশ নিতে এলে আওয়ামী দোসরদের অংশগ্রহণের অভিযোগে শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে সভা পন্ড হয় এবং আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সভাস্থান ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়। এসময় তারা ভ্যানে করে নিজ নিজ বিভাগে যেতে থাকলে শিক্ষার্থীরা তাদেরকে পেছন থেকে ‘দালাল ধর, দোসর ধর’ বলে ধাওয়া দেয়। পরে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগে গিয়ে বিভাগটির সভাপতি সহকারী অধ্যাপক শহিদুল ইসলামকে আগামীকাল থেকে ক্যাম্পাসে না আসার হুমকি প্রদান করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতা করে। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে গত বছরের ৪ আগস্ট আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরামের আন্দোলন বিরোধী মিছিলে তিনি অংশগ্রহণ করে। এছাড়া আন্দোলন পরবর্তী সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ইস্যুতে জুলাই আন্দোলনকে নিয়ে উপহাস করে পোষ্ট দেন। এছাড়াও প্রতিনিয়ত শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ বিভিন্ন পোস্ট করে আসছেন তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহসমন্বয়ক তানভীর মন্ডল বলেন, বিগত আওয়ামী শাসনামলে ছাত্রলীগের ক্যাডাররা জিয়া পরিষদের ও গ্রীন ফোরামের শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলাসহ বিভিন্নভাবে হেনস্তা করার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমরা জুলাই আন্দোলনের বিরোধিতাকারী আওয়ামী শিক্ষকদের বিষয়ে এমন কোনো কাজ করতে চাই না। আমরা চাই ঐ সব শিক্ষকরা তাদের ভুলের জায়গাটা স্বীকার করে অনুশোচনা করে ফিরে আসুক। তারা তাদের রুটিন কাজগুলো করুক কিন্তু তারা যদি এখনো তাদের পূর্বের রাজনৈতিক ধ্যান ধারণা লালন করে তাহলে আমরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।
এ বিষয়ে জানতে হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সভাপতি শহিদুল ইসলামকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দেয়া হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, মিটিংয়ে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা অংশ নেওয়ায় শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানায়। পরে তাদেরকে আমরা মিটিং থেকে শান্তিপূর্ণভাবে বের করে নিয়ে আসি। এছাড়া শহিদুল ইসলামের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, শিক্ষার্থীরা চলে যাওয়ার পর আমরা তার সাথে কথা বলেছি। সে জানালো যে ডরমিটরিতে গিয়ে একটু বিশ্রাম নেবে। পরে আমরা তাকে নিরাপদে সেখানে পৌঁছে দিয়েছি।
এসম্পর্কে ফেসবুকে একই বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মতিন আনন্দ লিখেন, আজকে ইবি শিক্ষক শহীদুল ইসলামের সঙ্গে যা হয়েছে, তা মূলত শহীদুল ইসলামেরই দেখানো পথ। শিক্ষক শহীদুল ইসলাম শহীদ মিনারে ফুল দেওয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি করেছেন, ভিসির রুমে গিয়ে ভিসিকে হাত উঁচিয়ে মারতে গেছেন—এর ভিডিও এখনো পাওয়া যাবে। তিনি এই মানের শিক্ষক। শহীদুল ইসলাম আমাকে আমার বন্ধুদের সামনে ফেসবুক পোস্টের কারণে অপমান করেছেন ও গালাগালি করেছেন। আমার পোস্ট শেয়ার দেওয়ার জন্য আমার জুনিয়রকে পরীক্ষার রুম থেকে অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে নানা ভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। আজ তাঁরই ফেসবুক পোস্ট তাঁকে একইভাবে হেনস্তার মুখে ফেলেছে।
উল্লেখ্য, বিগত ৫ তারিখে নিজের ফেসবুক ওয়ালে শহিদুল ইসলাম লিখেন, “তোমরা স্থাপনার নাম চেঞ্জ করতে পারো! হৃদয়ে যাকে ধারণ করেছি তাকে চেন্জ করবে কি করে? যতদিন বাচবো শেষ রক্ত বিন্দু বলবে বঙ্গবন্ধু। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।”
