ঢাকা ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ সংবাদ
Logo হাঁসের মৃত্যুহার কমাতে বাকৃবির ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন সিড, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর Logo প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক পদ বাতিলের প্রতিবাদে জাবিতে ‘গানের মিছিল’ Logo হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর উদ্যোগে মেয়েদের ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা Logo সাংবাদিক মেরে বহিস্কৃত তিন ইবি শিক্ষার্থী, থাকতে পারবেন না হলেও Logo মানোন্নয়ন নীতিমালা সংস্কার ও বিশেষ পরীক্ষার সুযোগ চেয়ে জাকসুর স্মারকলিপি Logo উৎসবমুখর পরিবেশে ইবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে PSOB-এর নির্বাচন সম্পন্ন Logo জাবিতে পুনরায় অটোরিক্সা চালুর অনুমোদনে কমিটি গঠন Logo জাবি শিক্ষিকার বিরুদ্ধে জামায়াত নেতার মানহানির মামলা, ছাত্রদলের নিন্দা Logo পরিবেশ সচেতনতায় ইবি গ্রীন ভয়েসের পোস্টার প্রেজেন্টেশন প্রতিযোগিতা Logo কোনো ডেটা খরচ ছাড়াই আয়কর ই-রিটার্ন দাখিলের সুযোগ দিচ্ছে রবি

শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আপনাদের পাশে চাই: যবিপ্রবি উপাচার্য

  • রায়হান আহমদ
  • প্রকাশিত ১০:০৫:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৮৬ বার পঠিত

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে যবিপ্রবির অর্জন ঈর্ষনীয়। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণায় ইতোমধ্যে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নিয়েছে। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমি আপনাদেরসহ যশোরের সকল শুভানুধ্যয়ী ও বিদ্যানুরাগীদের পাশে চাই।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত “শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের লক্ষ্যে” সাংবাদিকবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ সাংবাদিকদের প্রতি এ আহ্বান জানান। সূচনা বক্তব্যে তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। আর ২০২৪-এর আন্দোলনে যাঁরা আহত হয়ে এখনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন, তাদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।

মতবিনিময় সভায় অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি ও উন্নয়ন নিয়ে বলেন, যোগদান পরবর্তী সময় থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি পূরণের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা করে যাচ্ছি। আমার মূল লক্ষ্য হলো যবিপ্রবি-কে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্বমানে উন্নীতকরণ এবং উন্নত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত করা। শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত করতে শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল কনফারেন্স, উচ্চশিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজনের ধারা অব্যহত থাকবে। জুলাই উদযাপনের কার্যক্রম হিসেবে জুলাই কর্ণারের কাজ চলমান আছে। এছাড়াও, যবিপ্রবির প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর যেটি অত্যন্ত অযত্ন্ন ও অবহেলায় পড়ে ছিল, সেটিকে সম্মানের সাথে সুন্দরভাবে পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে। সেই সাথে নামফলক বরাবর দৃষ্টিনন্দন নতুন গেইটের ডিজাইন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যার কাজও দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

যবিপ্রবি উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবী প্রেক্ষিতে যবিপ্রবি’র দুইটি নতুন হল চালু, লিফট এর সমস্যা সমাধান, শিক্ষার্থীদের জন্য হলের ভেতরে সকল ধরণের নাগরিক সুবিধা চালু, সকল হলের ডাইনিং আধুনিকীকরণ, বিভিন্ন ভবনের নাম পরিবর্তন, রাস্তা ও ফুটপাত সংস্কার ও প্রশস্তকরণ, পরিবহন সমস্যার স্থায়ী সমাধান, পরিবহন পুলে যানবাহন সংখ্যা বৃদ্ধি, বিভিন্ন রুটে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন পরিবহন সংযোজন. বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া চালু, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের কনফারেন্স রুম আধুনিকায়ন, একাডেমিক ভবনের ক্যান্টিন পুনঃসংস্কার, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত প্রকাশের জন্য অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রম আধুনিকায়ন, সার্বক্ষণিক জরুরী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জরুরী সেবা কেন্দ্র চালু, যবিপ্রবির ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরলস প্রচেষ্টায় গত ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল (বিভিসি) এর আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন লাভসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাগিং ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মোতাবেক রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষামুখী করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এবারই বৃত্তি প্রদানের জন্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং বৃত্তির পরিমাণ উভয়ই বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও যবিপ্রবির স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করার লক্ষ্যে রিসার্চ ফেলোশিপ চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যবিপ্রবিতে সেন্টার ফর ট্রেইনিং অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট (সিটিএসডি) যাত্রা শুরু করেছে। যশোরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা যেন এই সুবিধা পেতে পারে সে লক্ষ্যে যশোর শহরে এই সেন্টারের একটি শাখা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের বেকারত্বের হার হ্রাসকরণে ও কর্মসংস্থানের অভাব দূরীকরণে যবিপ্রবি ইনোভেশন অ্যান্ড স্টার্ট-আপ সাপোর্ট সেল গঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)। আইকিউএসি সেলকে সহায়তা করতে গঠন করা হয়েছে অ্যাক্রেডিটেশন সাপোর্ট সেল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ ও বৃহত্তর যশোর জেলার জনমানুষের কল্যাণে যবিপ্রবি কাজ করে যাবে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ আগস্ট যবিপ্রবির উদ্ভাবিত আধুনিক ও উন্নতমানের-রোগমুক্ত জারবেরা ফুলের অনুচারা ফুলের রাজ্য খ্যাত গদখালির পানিসারার মাঠ পর্যায়ে সরাসরি নিয়োজিত বাণিজ্যিক ফুলচাষীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। যশোরের মানুষের কল্যাণে দ্রুতই যশোর শহরস্ত নির্ধারিত স্থানে ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের আওতায় ফিজিও কেয়ার খোলা হবে। এছাড়াও নার্সিং কেয়ার খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সাথে মলিকুলার রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে যবিপ্রবি। উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্রাকিশ ওয়াটার সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সাতক্ষিরায় “কোস্টাল অ্যান্ড ব্রাকিশওয়াটার সেন্টার” স্থাপন করা হবে। ‘যশোরের যশ খেজুরের রস’ এই ক্রমহ্রাসমান ঐতিহ্য রক্ষার জন্য খেজুরের জাত উন্নয়ন, বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের গাছ চাষের প্রসার, খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্র তৈরির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার আওতাভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে Pilot Workshop for Light Engineering Industry ¯’vcb, Regional Energy Research Hub স্থাপন Ges ২ টি Research Building স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও, বর্তমান বিশ্বে অধিক চাহিদা সম্পন্ন Nanotechnology বিভাগ, Aerospace Engineering বিভাগ, Artificial Intelligence (AI) বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ নতুভাবে খোলার পরিকল্পনা আছে।

যবিপ্রবি উপাচার্য শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে সাংবাদিকদের পাশে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, যবিপ্রবির আয়তন মাত্র ৩৫ একর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপরিধি ও কলেবর ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতো অল্প জায়গায় ক্রমবিকাশমান শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করা অতীব প্রয়োজন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) নতুন প্রজেক্ট প্রোপোজাল পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে উক্ত প্রোপোজালটির কিছু বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে পুনরায় প্রেরণের জন্য ইউজিসি থেকেও পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। প্রোপোজাল সংশোধনীর কাজ চলমান রয়েছে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশোধিত প্রোপোজালটি ইউজিসি-তে প্রেরণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বৃহত্তর যশোরবাসীর প্রাণের দাবী। এজন্য আপনাদের মাধ্যমে আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও এ বিশ্ববিদালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলর, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যশোরের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ইতিহাস অনেক পুরোনো। আপনাদের দীর্ঘদিনের দাবী এবং আকাঙ্খার ফলস্বরূপ এই প্রাণের বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যদিও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছিয়ে দিতে এবং প্রশাসনকে জনসমক্ষে অকার্যকর প্রমাণ করতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিভিন্ন অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, তবুও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ধরে রাখার জন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। আপনাদের সকলের সাহায্য ও সমর্থনে যবিপ্রবি শিক্ষা ও গবেষণায় আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন, যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মতিবিনিময় সভায় সাংবাদিকবৃন্দ বিভিন্ন গঠনমূলক প্রশ্ন ও পরামর্শ দেন। যবিপ্রবির প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রশ্ন ও পরামর্শগুলো ইতিবাচক গ্রহণ করে ভবিষ্যতে তা কার্যকর করার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়।

জনপ্রিয়

হাঁসের মৃত্যুহার কমাতে বাকৃবির ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন সিড, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর

শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় আপনাদের পাশে চাই: যবিপ্রবি উপাচার্য

প্রকাশিত ১০:০৫:৪১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক পরিসরে যবিপ্রবির অর্জন ঈর্ষনীয়। কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণায় ইতোমধ্যে বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে জায়গা করে নিয়েছে। এ অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমি আপনাদেরসহ যশোরের সকল শুভানুধ্যয়ী ও বিদ্যানুরাগীদের পাশে চাই।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টায় যবিপ্রবির প্রশাসনিক ভবনের সম্মেলন কক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত “শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের লক্ষ্যে” সাংবাদিকবৃন্দের সাথে মতবিনিময় সভায় যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ সাংবাদিকদের প্রতি এ আহ্বান জানান। সূচনা বক্তব্যে তিনি ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে ২০২৪-এর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদেরকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। আর ২০২৪-এর আন্দোলনে যাঁরা আহত হয়ে এখনও চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন, তাদের আশু সুস্থতা কামনা করেন।

মতবিনিময় সভায় অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুল মজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি ও উন্নয়ন নিয়ে বলেন, যোগদান পরবর্তী সময় থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবি পূরণের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা করে যাচ্ছি। আমার মূল লক্ষ্য হলো যবিপ্রবি-কে শিক্ষা ও গবেষণায় বিশ্বমানে উন্নীতকরণ এবং উন্নত শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত করা। শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত করতে শিক্ষা ও গবেষণা উন্নয়নের লক্ষ্যে ন্যাশনাল কনফারেন্স, উচ্চশিক্ষা ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক সেমিনার ও কর্মশালা আয়োজনের ধারা অব্যহত থাকবে। জুলাই উদযাপনের কার্যক্রম হিসেবে জুলাই কর্ণারের কাজ চলমান আছে। এছাড়াও, যবিপ্রবির প্রথম ভিত্তিপ্রস্তর যেটি অত্যন্ত অযত্ন্ন ও অবহেলায় পড়ে ছিল, সেটিকে সম্মানের সাথে সুন্দরভাবে পুনরায় স্থাপন করা হয়েছে। সেই সাথে নামফলক বরাবর দৃষ্টিনন্দন নতুন গেইটের ডিজাইন ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যার কাজও দ্রুততম সময়ের মধ্যে দৃশ্যমান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

যবিপ্রবি উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবী প্রেক্ষিতে যবিপ্রবি’র দুইটি নতুন হল চালু, লিফট এর সমস্যা সমাধান, শিক্ষার্থীদের জন্য হলের ভেতরে সকল ধরণের নাগরিক সুবিধা চালু, সকল হলের ডাইনিং আধুনিকীকরণ, বিভিন্ন ভবনের নাম পরিবর্তন, রাস্তা ও ফুটপাত সংস্কার ও প্রশস্তকরণ, পরিবহন সমস্যার স্থায়ী সমাধান, পরিবহন পুলে যানবাহন সংখ্যা বৃদ্ধি, বিভিন্ন রুটে প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন পরিবহন সংযোজন. বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া চালু, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের কনফারেন্স রুম আধুনিকায়ন, একাডেমিক ভবনের ক্যান্টিন পুনঃসংস্কার, শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল দ্রুত প্রকাশের জন্য অনলাইন ভিত্তিক কার্যক্রম আধুনিকায়ন, সার্বক্ষণিক জরুরী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জরুরী সেবা কেন্দ্র চালু, যবিপ্রবির ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতে ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরলস প্রচেষ্টায় গত ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ বাংলাদেশ ভেটেরিনারি কাউন্সিল (বিভিসি) এর আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন লাভসহ নানা ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের একটি নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণের জন্য এ বিশ্ববিদ্যালয়কে র‌্যাগিং ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মোতাবেক রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণা ও শিক্ষামুখী করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এবারই বৃত্তি প্রদানের জন্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং বৃত্তির পরিমাণ উভয়ই বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়াও যবিপ্রবির স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের গবেষণামুখী করার লক্ষ্যে রিসার্চ ফেলোশিপ চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে যবিপ্রবিতে সেন্টার ফর ট্রেইনিং অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট (সিটিএসডি) যাত্রা শুরু করেছে। যশোরের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা যেন এই সুবিধা পেতে পারে সে লক্ষ্যে যশোর শহরে এই সেন্টারের একটি শাখা খোলার পরিকল্পনা রয়েছে। দেশের বেকারত্বের হার হ্রাসকরণে ও কর্মসংস্থানের অভাব দূরীকরণে যবিপ্রবি ইনোভেশন অ্যান্ড স্টার্ট-আপ সাপোর্ট সেল গঠন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ইন্সটিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি)। আইকিউএসি সেলকে সহায়তা করতে গঠন করা হয়েছে অ্যাক্রেডিটেশন সাপোর্ট সেল। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গ ও বৃহত্তর যশোর জেলার জনমানুষের কল্যাণে যবিপ্রবি কাজ করে যাবে। তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ আগস্ট যবিপ্রবির উদ্ভাবিত আধুনিক ও উন্নতমানের-রোগমুক্ত জারবেরা ফুলের অনুচারা ফুলের রাজ্য খ্যাত গদখালির পানিসারার মাঠ পর্যায়ে সরাসরি নিয়োজিত বাণিজ্যিক ফুলচাষীদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। যশোরের মানুষের কল্যাণে দ্রুতই যশোর শহরস্ত নির্ধারিত স্থানে ফিজিওথেরাপি অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের আওতায় ফিজিও কেয়ার খোলা হবে। এছাড়াও নার্সিং কেয়ার খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সাথে মলিকুলার রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে যবিপ্রবি। উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও ব্রাকিশ ওয়াটার সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে সাতক্ষিরায় “কোস্টাল অ্যান্ড ব্রাকিশওয়াটার সেন্টার” স্থাপন করা হবে। ‘যশোরের যশ খেজুরের রস’ এই ক্রমহ্রাসমান ঐতিহ্য রক্ষার জন্য খেজুরের জাত উন্নয়ন, বাণিজ্যিকভাবে খেজুরের গাছ চাষের প্রসার, খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের ক্ষেত্র তৈরির বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার আওতাভুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ভবিষ্যতে Pilot Workshop for Light Engineering Industry ¯’vcb, Regional Energy Research Hub স্থাপন Ges ২ টি Research Building স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়াও, বর্তমান বিশ্বে অধিক চাহিদা সম্পন্ন Nanotechnology বিভাগ, Aerospace Engineering বিভাগ, Artificial Intelligence (AI) বিভাগসহ বেশ কয়েকটি বিভাগ নতুভাবে খোলার পরিকল্পনা আছে।

যবিপ্রবি উপাচার্য শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে সাংবাদিকদের পাশে থাকার আহবান জানিয়ে বলেন, যবিপ্রবির আয়তন মাত্র ৩৫ একর। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মপরিধি ও কলেবর ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতো অল্প জায়গায় ক্রমবিকাশমান শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তরিত হতে যাচ্ছে। ফলে নতুন করে ভূমি অধিগ্রহণ করা অতীব প্রয়োজন। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি) নতুন প্রজেক্ট প্রোপোজাল পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে উক্ত প্রোপোজালটির কিছু বিষয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধন করে পুনরায় প্রেরণের জন্য ইউজিসি থেকেও পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। প্রোপোজাল সংশোধনীর কাজ চলমান রয়েছে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশোধিত প্রোপোজালটি ইউজিসি-তে প্রেরণ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূমি অধিগ্রহণের বিষয়টি সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বৃহত্তর যশোরবাসীর প্রাণের দাবী। এজন্য আপনাদের মাধ্যমে আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও এ বিশ্ববিদালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলর, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যশোরের শিক্ষা ও সংস্কৃতির ইতিহাস অনেক পুরোনো। আপনাদের দীর্ঘদিনের দাবী এবং আকাঙ্খার ফলস্বরূপ এই প্রাণের বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যদিও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছিয়ে দিতে এবং প্রশাসনকে জনসমক্ষে অকার্যকর প্রমাণ করতে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে বিভিন্ন অসত্য তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে, তবুও আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতি ধরে রাখার জন্য আমি আপনাদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি। আপনাদের সকলের সাহায্য ও সমর্থনে যবিপ্রবি শিক্ষা ও গবেষণায় আরও অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় যবিপ্রবির কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হোসেন আল মামুন, যশোর প্রেসক্লাবের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। মতিবিনিময় সভায় সাংবাদিকবৃন্দ বিভিন্ন গঠনমূলক প্রশ্ন ও পরামর্শ দেন। যবিপ্রবির প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাঁদের প্রশ্ন ও পরামর্শগুলো ইতিবাচক গ্রহণ করে ভবিষ্যতে তা কার্যকর করার জন্য লিপিবদ্ধ করা হয়।