বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেছেন, ড্যাপ নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল সবসময়ই অপপ্রচারণা চালিয়েছে। ড্যাপ অচিরেই সংশোধন করা হবে, এই বার্তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিয়ে ভবন নির্মাণে আগ্রহী ভবন মালিকদের নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বাংলামোটরে বিআইপির কনফারেন্স রুমে ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালার সংশোধনে জনস্বার্থ, পরিবেশ ও বাসযোগ্যতার সংকট শীর্ষক ‘নাগরিক সংলাপে তিনি এ কথা বলেন।
পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ইমারত নকশা ও নির্মাণ সংশ্লিষ্ট অনেক পেশাজীবী নতুন ড্যাপের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ভবন নকশায় আগ্রহী না হয়ে ভবন মালিকদের ভিন্ন বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের সঙ্গে সঙ্গে বারংবার স্বার্থান্বেষী মহলের বাধার কারণে সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হতে পারছে না।
তিনি বলেন, গত দুটি বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রণয়নের পরপরই রিভিউ কমিটি গড়ে ড্যাপ বাস্তবায়নের মূল শক্তিটাই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই প্রভাবশালী মহলের কাছে সামগ্রিক জনস্বার্থ, শহরের বাসযোগ্যতাকে ছাড় দিয়েছে। অনুরূপভাবে বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা ২০০৪ এর সংশোধন করা হয় ২০১৫ সালে, যাতে আবাসন ব্যবসায়ীদের চাপে জনস্বার্থ উপেক্ষা করে নাগরিক সুবিধাদির মানদণ্ড বা স্ট্যান্ডার্ড অনেক কমিয়ে ফেলা হয়েছে, ফলে পরিমাণ কমেছে পার্ক, খেলার মাঠ, বিদ্যালয় প্রভৃতি নাগরিক সুবিধাদিতে।
বিআইপির সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, যে কোনো শহরের টেকসই পরিকল্পনা এবং সামগ্রিক জনস্বার্থ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় বিধি বিধান সম্বলিত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা প্রণয়ন এবং সেটির কার্যকর বাস্তবায়ন অত্যন্ত প্রয়োজন। ঢাকা যানজট, বায়ুদূষণ, জলাবদ্ধতা, পার্ক-খেলার মাঠসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধাদি ও পরিষেবার দিক দিয়ে অত্যন্ত সংকটপূর্ণ অবস্থায় আছে, যার পেছনে নগর পরিকল্পনার সঠিক কৌশল প্রয়োগ না করবার পাশাপাশি ইতিপূর্বে জনঘনত্ব পরিকল্পনা প্রণয়ন না করা এবং বিদ্যমান ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় এফএআর এর উচ্চ মানের ও দায় আছে।
বিআইপির উপদেষ্টা পরিষদের আহ্বায়ক পরিকল্পনাবিদ মো. ফজলে রেজা সুমন, ড্যাপকে পুরো ঢাকা শহরের সমন্বিত উন্নয়নের একটি দলিল বলা হয় যেখানে ভূমি ব্যবহার, নাগরিক সুবিধা সশ সব কিছুই আলোচনা করা আছে। কিন্তু কিছু স্বার্থনেশি মহল এটাকে ফ্যাসিস্ট সরকারের দলিল বলে আখ্যায়িত করছে যা অত্যন্ত দুঃখজনক। ড্যাপ পর্যালোচনার জন্য যে কমিটি রয়েছে রাজউকের উচিত সেখানে নাগরিক সমাজকে যুক্ত করা।
বাংলাদেশ গাছ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়কারী আমিরুল রাজীব বলেন, ড্যাপ পর্যালোচনার জন্যে ১৫ সদস্য বিশিষ্ট যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সেখানে কয়েকজন সরকারি আমলা, পেশাজীবী আর্কিটেক্ট, ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন প্ল্যানার রয়েছে। এই কমিটিতে উচিত ছিল আরও প্ল্যানার ও নিরপেক্ষ পেশাজীবী, পরিবেশকর্মী এবং নাগরিক সমাজকে সংযুক্ত করা।
ধরিত্রী আন্দোলনের সদস্য সচিব মোহাম্মদ শরীফ জামিল বলেন, সমন্বিত নগর পরিকল্পনার অভাবে শহরের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছে। একদল মানুষ শুধু মনে করে যেকোনো রকম একটি প্ল্যান করলেই হয়ে যায় কিন্তু এই প্ল্যানের প্রভাব শহরের যান চলাচল, শহরের মানুষের খাদ্য ও বাসস্থান, সব কিছুকেই প্রভাবিত করে সে বিষয়ে তারা অবগত নয়। তাই জনগণের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা উচিত।
ইন্সটিটিউশন অফ ফরেস্টার্স বাংলাদেশের (আইএফবি) সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান বলেন, নাগরিক হিসেবে আমরা কেউ এই ঢাকা শহরকে পছন্দ করি না কারণ দিন দিন তা আমাদের জন্যে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে যে কোনো প্রকল্প বা স্থাপনা বাস্তবায়নের সময় ইন্টারন্যাশনাল যে ষ্ট্যান্টার্ডগুলো রয়েছে তা অনুসরণ করা হয় না।
বায়ুমণ্ডল অধ্যায় কেন্দ্রের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, জলাবদ্ধতা, যানজট ও বর্জ্য অব্যবস্থাপনার কারণে ঢাকা অমানবিক শহরে পরিণত হয়েছে। বিগত সরকারের দুর্বলতার কারণে শহরের পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা পিছিয়ে আছে।
পরিকল্পনাবিদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ব্যবসায়ীরা নিয়ম ভঙ্গ করে বৈষম্য সৃষ্টি করছে। পরিকল্পিত নগরায়ণের জন্য আইন মেনে দীর্ঘমেয়াদি চিন্তা ও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।
