ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগঠন (ইকসু) গঠন এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘ইকসু গঠন আন্দোলন’ নাম্নী এক নতুন প্লাটফর্ম । তবে এতে জুলাই পক্ষের সকল স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণ নেই বলে দাবী অংশীজনদের।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইকসু গঠন আন্দোলন’র ব্যানারে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় এক সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন আট শিক্ষার্থী।
এসময় বলেন, ‘যতদিন পর্যন্ত না ইকসুর রোডম্যাপ ও বাস্তবায়ন হবে ততদিন এই আন্দোলন চলমান থাকবে। এছাড়াও ইকসু গঠন আন্দোলনের আগামী এক সপ্তাহের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা।’ তবে এই সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ একযোগে সেখান থেকে ওয়াকআউট করেন।
ছাত্র সংগঠনগুলোর অভিযোগ, ‘ইকসু সকল শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি, কিন্তু এখানে যারা সংবাদ সম্মেলন করছে তারা পূর্বে কারো সাথেই আলোচনা করেনি। কর্মসূচি কি হবে, কিভাবে ইকসু দ্রুত বাস্তবায়ন হবে এ বিষয়ে কিছুই আলোচনা হয়নি। আমাদের সংবাদ সম্মেলনের মাত্র ৩০-৪০ মিনিট পূর্বে জানিয়েছিল। ইকসু যৌক্তিক দাবি হওয়ায় এই অল্প সময়ের মধ্যেই এখানে উপস্থিত হয়েছি। কিন্তু এখানে ডেকে আমাদের দর্শকের ভূমিকায় রাখা হয়েছে। পূর্বে কোন রকম আলোচনার সুযোগও দেওয়া হয়নি। তারা কয়েকজন নিজেদের মত সংবাদ সম্মেলন করছে, আমরা দর্শকের মত পিছনে বসে শুনেছি। এখানে ইকসু বাস্তবায়নের চাইতে কেউ কেউ নেতা হওয়ার চেষ্টায় বেশি ভূমিকা রাখছে বলে মনে হয়েছে।’
একইভাবে কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে নারী শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নেই কেন?কাদের সাথে আলোচনা করে সংবাদ সম্মেলন করছেন? ছাত্রলীগের অন্যায় কার্যকলাপে সক্রিয়ভাবে জড়িত ব্যক্তিদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছেন। এছাড়াও ক্যাম্পাসে চলমান আলোচিত ইস্যু সাজিদ হত্যা ও ফ্যাসিবাদী শিক্ষকদের বিচারকে আড়াল করতেই এরকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।’
সংবাদ সম্মেলন করা আট শিক্ষার্থী হলেন, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বোরহান উদ্দিন, আল ফিকহ এন্ড ল বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের হাসিব আল সজিব, ইসলামী ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্স ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের রাকিবুল ইসলাম, আল হাদিস এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের সাজ্জাতুল্লাহ শেখ, আল ফিকহ এন্ড ল বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সায়েম আহম্মেদ, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়াবিজ্ঞান বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের আহমাদ আল আলামিন ও একই শিক্ষাবর্ষের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের জুলকারনাইন দোলন।
এছাড়াও এসময় উপস্থিত ছিলেন ইবি শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ, শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট, ছাত্র ইউনিয়ন ইবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক আহমাদ গালিব, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ইবি শাখার সভাপতি ইসমাইল হোসেন রাহাত, খেলাফতে ছাত্র মজলিস ইবি শাখার সভাপতি সাদেক আহম্মেদসহ সংগঠনগুলোর অন্যান্য নেতাকর্মীরা। তবে সংবাদ সম্মেলনের একপর্যায়ে সকল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সেখান থেকে ওয়াকআউট করেন।
এবিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইবির সাবেক সমন্বয়ক এস এম সুইট বলেন, ‘ইকসু বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর অধিকার। ইকসু গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ছাত্রসংগঠন প্রশাসনকে বিভিন্ন সময় স্মারকলিপি ও প্রস্তাবনা দিয়েছে। কিন্তু এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ইকসু নিয়ে কোন উদ্যোগ প্রশাসন নেয়নি। তাই আমরা চেয়েছিলাম সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে ইকসু গঠনে আন্দোলন করবো। সকল ছাত্র সংগঠন ও আমাদের ছাত্রী বোনদের সাথে নিয়ে এই আন্দোলন হবে। কিন্তু এখানে এসে দেখছি পূর্ব আলোচনা ব্যতিত ও নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছাড়াই এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করছে কয়েকজন। আমরা চাই সকলের অংশগ্রহণে এই আন্দোলন হোক এবং ইকসু বাস্তবায়ন হোক।’
শাখা ছাত্রদলের আহবায়ক সাহেদ আহম্মেদ বলেন, ‘ইকসু নিয়ে আলোচনা করবে বলে কল দিয়েছিল একজন। তার প্রেক্ষিতে আমরা ছাত্র সংগঠনগুলো এখানে এসেছি। যেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাই আমাদের ভুল না বুঝে। এসে দেখলাম সাংবাদিকদের সাথে ৬-৭ জন শিক্ষার্থী আলোচনা করছে। রাত ৯টায় কেন করা হলো আমার বোধগম্য নয়। নারী শিক্ষার্থী বোনরা আসতে পারলো না, অথচ ৫ আগস্টের আন্দোলনে যাদের অগ্রণী ভূমিকা ছিল। তারা কেন আলোচনার বাহিরে থাকবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে দুই-পাঁচজন মনগড়া প্লাটফর্ম দাঁড় করালো এটা তো হতে পারে না। লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন হিসেবে আমরা ইকসু চাই না শিক্ষার্থীদের এমন ভুল মেসেজ দিচ্ছে। অথচ ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে কোনো ধরনের মতানৈক্য হয়নি। ইকসু গঠনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আদায় করতে চাই।’
শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘ইকসু আমাদের আবেগের জায়গা। এজন্য যখন কেউ আহ্বান করে ছাত্রসংসদের জন্য কাজ করতে হবে তখন আমরা দলমত নির্বিশেষে সবাই সেখানে চলে আসি। এখানে আমরা এটা চিন্তা করি না যে কে নেতৃত্ব দিচ্ছে আর কে পিছনে থাকছে বা থাকছে না। এজন্য যারাই কর্মসূচি দেয় আমরা তাদের সাথে থাকতে চাই। বাস্তবিক অর্থে এখানে এসে আমাদের যেটা মনে হয়েছে যে এখানে কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে নেতাবনে যাওয়া একটা প্রবণতা কাজ করছে। উনারা ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দদের একবার বলছেন আহ্বান করেছে অন্যদিকে বলছেন আহ্বান করছেন না। মনে করছিলাম সকল ছাত্রসংগঠন সহ সকল শিক্ষার্থীরা একসাথে বসে একটি প্লাটফর্ম থেকে আন্দোলন ঘোষণা করা হবে। কিন্তু এখানে এসে দেখি একবার বলা হচ্ছে সাংবাদিকদের ডেকেছি; শিক্ষার্থীদের ডাকি নাই আবার বলা হচ্ছে ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের ডাকি নাই। আমরা বলতে চাই- ছাত্রসংসদ চালু হওয়া আমার মনে হয় প্রত্যেকটা শিক্ষার্থীর প্রাণের দাবি। ছাত্রসংসদ কোন দল, গুষ্টি বা কোন মুষ্টিময় মানুষের সম্পদ না। এটা সকল শিক্ষার্থীদের সম্পদ এজন্য আমার কাছে মনে হয় এটা আরো ইনক্লুসিভ হওয়া উচিত ছিল। বোনদের অংশগ্রহণ সহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক প্লাটফর্মে আসার আহ্বান করছি।’
