বজ্রপাত রোধ ও সৌন্দর্যবর্ধনের লক্ষ্যে প্রাক্তন শিক্ষার্থীর উদ্যোগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফলিত পুষ্টি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগ ক্যাম্পাসে দেড় হাজার তালগাছের বীজ বপন কর্মসূচির উদ্বোধন করেছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরপাড়ে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান, বিভাগের শিক্ষক ও শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক এটিএম মিজানুর রহমান, এবং অধ্যাপক সেলিম রেজাসহ অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
জানা যায়, বিভাগের ২০০০-০১ শিক্ষাবর্ষের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান ও তার খালাতো ভাইয়ের সমন্বয়ে ক্যাম্পাসে দেড় হাজার তালবীজ বপনের উদ্যোগ নেন। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্যবর্ধনে এবং বজ্রপাত দূর্ঘটনা এড়াতে এ পদক্ষেপ নেন মাহফুজুর। এতে বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যৌথভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. হাফিজুর রহমান বলেন বলেন, “এ কর্মসূচির উদ্যোক্তা আমাদের এক অ্যালামনাই। তিনি বিষয়টি নিয়ে আমাকে অনেক দিন ধরে অবগত করেছেন। সেই ধারাবাহিকতায় বিভাগে আলোচনা করে আজ এ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। বৃক্ষ তো সবাই রোপণ করে, তবে তালগাছ কিছুটা ব্যতিক্রম। এর পুষ্টিগুণ রয়েছে, যা আমরা অনেকেই জানি না। পাশাপাশি তালগাছ বজ্রনিরোধক হিসেবে কাজ করে, যা মানুষের জীবন রক্ষায় ভূমিকা রাখে। আবার সীমানা প্রাচীরের ধারে, পুকুরপাড়ে কিংবা নিচু এলাকায় তালগাছ লাগালে তা পরিবেশ ও সৌন্দর্য-উভয় দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
এসময় বীজ অনুদান দেওয়া মাহফুজুর রহমান ভিডিও কলে সংযুক্ত হয়ে বলেন, ‘এটি আমাদের একটি সামাজিক কাজ। আমি মনে করি, সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করা সবার জন্যই একটি সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই উদ্যোগটি শুধুমাত্র আমার নয়, এটি আমাদের সবার উদ্যোগ। আমি তখনই সবচেয়ে বেশি খুশি হব যখন প্রতিটি মানুষ এই উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করবে এবং নিজেদের এলাকায় এটি বাস্তবায়ন করতে চাইবে। এখানে যারা বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী আছেন, আপনাদের এই অবদান পরিবেশের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে এখন বজ্রপাতে যেভাবে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, সেখান থেকে আমাদেরকে এই গাছগুলো বাঁচাতে সাহায্য করবে বলে আমি মনে করি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এয়াকুব আলী বলেন, ‘আমাদের এই ক্যাম্পাসটি সবুজে ঘেরা, নয়নাভিরাম পরিবেশ এবং আমার মনে হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরেই গাছ-গাছালি এবং সবুজায়নের ক্ষেত্রে আমাদের স্থান। আমাদের ক্যাম্পাসের কিছু কিছু গাছ মরে গিয়েছে তদারকির অভাবে। চারা রোপণের সিজন প্রায় শেষের দিকে, তারপরও আমরা তালগাছের বীজ বপন করলাম। চারা রোপণ করলে বৃক্ষ থাকবে মানুষ থাকবে, পৃথিবী থাকবে, পরিবেশ সুন্দর হবে। আমাদের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে গাড়ির কালো ধোঁয়া এবং ডিজেল, পেট্রোল ইত্যাদির ব্যবহারের কারণে সেটা থেকে আমরা কিছুটা মুক্তি পাবো এই সবুজ পরিবেশের কারণে। এই নয়নাভিরাম পরিবেশকে ধরে রাখার জন্য প্রত্যেকটি মানুষেরই গাছ লাগানো উচিত। তালগাছ বজ্রনিরোধক, গাছ যদি বাঁচে মানুষ বাঁচবে, পৃথিবী বাঁচবে। এই পৃথিবীকে আমরা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর, নিরাপদ করে রাখা আমাদের গুরুদায়িত্ব। বিভাগের ২০০০-০১ সেশনের প্রাক্তন ছাত্র মাহফুজুর রহমান দেড় হাজার তালগাছের বীজ অনুদান দিয়েছেন। আশা করছি মাহফুজুর রহমান গাছ অনুদান দেওয়ার সিস্টেমটি সবসময় জারি রাখবেন সেই কামনা ও দোয়াই আল্লাহর কাছে করি।’
