জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিশমাইল এলাকায় ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় নির্মাণাধীন স্টাফ কোয়ার্টারের ভবন থেকে পড়ে এক নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।
রবিবার (২ নভেম্বর) দুপুর ২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুরাদ চত্বর থেকে ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’-এর ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, পরিকল্পনাহীন ও নিরাপত্তাহীন নির্মাণ প্রক্রিয়ার কারণেই বারবার শ্রমিকের মৃত্যু ঘটছে। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তিন দফা দাবি জানান। দাবিগুলো হলো, শ্রমিক রাকিবের মৃত্যুর ঘটনাটি দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনা, নিহত শ্রমিকের পরিবারকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা প্রদান ও একজন সদস্যকে চাকরির ব্যবস্থা করা, চলমান সব নির্মাণ প্রকল্পে শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সেফটি ইকুইপমেন্ট সরবরাহ করা।
সমাবেশে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জাবি শাখার সংগঠক সজিব আহমেদ জেনিচ বলেন, মাস্টারপ্ল্যান ছাড়া নির্মাণ কাজ চলায় একের পর এক শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম দিচ্ছে না, তাদের গাফিলতির কারণেই রাকিবের মৃত্যু হয়েছে। এই দায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উভয়ের।
তিনি আরও বলেন, “তদন্ত প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করে দোষীদের শাস্তি দিতে হবে এবং রাকিবের পরিবারকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা দিতে হবে।”
সমাবেশে উপস্থিত অন্যান্য নেতৃবৃন্দ বলেন, রাকিবের মৃত্যু কোনো দুর্ঘটনা নয়, বরং এটি একটি কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড। তিন মাস আগে একইভাবে লেকচার থিয়েটার ভবনের নির্মাণকাজে অংশ নেওয়া শ্রমিক আরিফের মৃত্যুর পরও প্রশাসন কোনো বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি। তারা অভিযোগ করেন, মাস্টারপ্ল্যানবিহীন ও অব্যবস্থাপনায় ভরা এসব প্রকল্প একের পর এক শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
অন্যদিকে শ্রমিক রাকিবের অকাল মৃত্যুতে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান এক শোকবার্তায় গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এই মৃত্যু অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। এটি পরিবারের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।
তিনি জানান, দুর্ঘটনার পরপরই জরুরি প্রশাসনিক সভা আহ্বান করা হয়। সভায় নির্মাণাধীন ভবনের চারপাশে মানসম্মত সেফটি নেট স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সরঞ্জাম নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত একতলার ওপরে সব নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। পাশাপাশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিক সরবরাহকারীর গাফিলতি আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় নির্মিতব্য দশতলা স্টাফ কোয়ার্টার ভবনের অষ্টম তলা থেকে পড়ে রাকিব (২৬) নামের ওই শ্রমিক নিহত হন। তার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দাফন-কাফনসহ প্রাথমিকভাবে দুই লাখ টাকা প্রদান করেছে এবং পরবর্তী সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে।
















