জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে “ইউনিভার্সিটি টিচার্স লিংক (UTL)” নামে একটি শিক্ষক সংগঠন তাদের দশ দফা দাবি ঘোষণা করেছে এবং পরবর্তীতে সেটি উপাচার্য বরাবর প্রদান করেছে।
বুধবার (৬ নভেম্বর) সংগঠনের আহ্বায়ক ড. মুহাম্মদ শামসুজ্জামান এবং সদস্য সচিব মো. হারুনুর রশিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ দাবিগুলো জানানো হয়।
ঘোষিত দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্বার্থরক্ষায় নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সবেতনে শিক্ষা ছুটি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অস্থায়ী শিক্ষকদের স্থায়ী করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি,গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ চর্চা, নেতৃত্ব তৈরি ও নিরাপদ ক্যাম্পাস গড়তে অবিলম্বে ছাত্র সংসদ সংবিধি অনুমোদনপূর্বক নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। শিক্ষকদের শিক্ষা উপকরণ, ব্যক্তিগত কক্ষ, পরিচ্ছন্ন ওয়াশরুম, শিক্ষক ক্লাবে খেলার উপকরণ ও আধুনিক শ্রেণিকক্ষ নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতি বিভাগে ছাত্র উপদেষ্টার পদ তৈরি করতে হবে।
শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য গবেষণা বরাদ্দ বাড়াতে হবে, গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশের জন্য একটি বাস্তবসম্মত নীতিমালার আওতায় যোগ্য শিক্ষকদেরকে এপিসি `আর্টিকেল প্রসেসিং চার্জ’ প্রদান করতে হবে। এর জন্য বার্ষিক নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। অপেক্ষামান পরীক্ষার বিলসমূহ পরিশোধ করার জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পরীক্ষা শেষ হওয়ার সর্বোচ্চ দুই মাসের মধ্যে বিল পরিশোধ করতে হবে। বাসা ভাড়া কর্তনের ক্ষেত্রে বাসার আয়তন, ফ্লাটের মান, সুযোগ-সুবিধা সহ প্রয়োজনীয় বিষয়াবলী বিবেচনায় নিতে হবে। বিভিন্ন প্রশাসনিক দায়িত্বে নিযুক্ত শিক্ষকদের প্রদেয় দায়িত্ব ভাতা বৃদ্ধি, আবাসন ও সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি “ডে কেয়ার সেন্টার” চালুর উদ্যোগ নিতে হবে এবং নবনির্মিত আবাসিক এলাকায় আরেকটি শিশু পার্ক নির্মাণ ও বর্তমান শিশুপার্কটির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষার্থীবৃন্দের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সেবা প্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে সহজ ও সম্মানজনক করতে হয়রানিমুক্ত মানসম্মত সেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগীয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারসমূহকে ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির জন্য কেন্দ্রীয় অ্যালামনাই গঠন বিভিন্ন প্রফেশনাল প্রোগ্রাম ও কোর্স চালু, পরিকল্পিত দোকান ও মার্কেট নির্মাণ এবং দক্ষ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
এ বিষয়ে ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সংগঠনের আহ্বায়ক ড. শামসুজ্জামান বলেন,
“জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউটিএল কমিটি গঠনের পর আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার জন্য একটি গুগল ফর্ম প্রেরণ করি। এর মাধ্যমে জানতে পারি, তারা কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং কোনগুলো সমাধানযোগ্য। সেই তথ্য বিশ্লেষণ করে আহ্বায়ক কমিটির প্রথম সভায় পর্যালোচনার মাধ্যমে দশটি দাবি নির্ধারণ করা হয়, যা পরে উপাচার্য স্যারের নিকট প্রেরণ করা হয়।
আমরা মনে করি, প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে এই দাবিগুলো সহজেই সমাধানযোগ্য এবং এর ফলে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ই উপকৃত হবেন। এই উদ্দেশ্যে আমরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি; তিনি দাবিগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও সংগঠনের সদস্য সচিব মো. হারুনুর রশিদ বলেন, “শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ন্যায্য ও যৌক্তিক যে দাবি বা অধিকার গুলোর পক্ষে ইউটিএল সব সময় কাজ করে যাবে এক্ষেত্রে আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীসহ সকলের সহযোগিতা চাই।”
উল্লেখ্য “ইউনিভার্সিটি টিচার্স’ লিংক (UTL)” ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস বিল্ডিং থেকে কার্যক্রম শুরু করলেও এখন বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করছে।
জ্ঞান, আত্মমর্যাদা, বিশ্বাস ও স্বাধীনতা—এই চার মূলনীতিকে ধারণ করে ২০২৫ সালের জুলাই মাসে ইউটিএল আত্মপ্রকাশ করে। জুলাই বিপ্লবের চেতনা ও মূল্যবোধকে ধারণ করে এই সংগঠন গঠিত হয়েছে; যার লক্ষ্য শিক্ষকদের মর্যাদা রক্ষা, একাডেমিক সততা, গবেষণার উৎকর্ষতা, নিরাপদ ও শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিতকরণে সহায়তা এবং জাতীয় নীতিনির্ধারণে শিক্ষকদের সক্রিয় ভূমিকা রাখা।





















