ঢাকা ০২:০২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫
সর্বশেষ সংবাদ
Logo হাঁসের মৃত্যুহার কমাতে বাকৃবির ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন সিড, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর Logo প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক পদ বাতিলের প্রতিবাদে জাবিতে ‘গানের মিছিল’ Logo হাবিপ্রবি শিক্ষার্থীর উদ্যোগে মেয়েদের ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা Logo সাংবাদিক মেরে বহিস্কৃত তিন ইবি শিক্ষার্থী, থাকতে পারবেন না হলেও Logo মানোন্নয়ন নীতিমালা সংস্কার ও বিশেষ পরীক্ষার সুযোগ চেয়ে জাকসুর স্মারকলিপি Logo উৎসবমুখর পরিবেশে ইবির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে PSOB-এর নির্বাচন সম্পন্ন Logo জাবিতে পুনরায় অটোরিক্সা চালুর অনুমোদনে কমিটি গঠন Logo জাবি শিক্ষিকার বিরুদ্ধে জামায়াত নেতার মানহানির মামলা, ছাত্রদলের নিন্দা Logo পরিবেশ সচেতনতায় ইবি গ্রীন ভয়েসের পোস্টার প্রেজেন্টেশন প্রতিযোগিতা Logo কোনো ডেটা খরচ ছাড়াই আয়কর ই-রিটার্ন দাখিলের সুযোগ দিচ্ছে রবি

আত্মহত্যা নয়, আত্মচেষ্টা জাগ্রত হোক

{"pictureId":"0F7FB8A2-7C58-4EA0-A33D-E1FCCFC79BF2","tiktok_developers_3p_anchor_params":"{"capability_name":"retouch_edit_tool","picture_template_id":"","source_type":"vicut","client_key":"aw889s25wozf8s7e"}","data":{},"exportType":"image_export","source_type":"vicut","editType":"image_edit"}

‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’ কবির কথাটি আমাদের সবারই আরাধনা। কেই-বা অকারণে অকাতরে মরতে চায়? বাঁচার জন্য মানুষের সে কী আহাজারি; তা হাসপাতালে গেলেই বোঝা যায়। একটি দিন বা একটি ঘণ্টা বাঁচার জন্য লাখ লাখ টাকা ঢেলে দিচ্ছে আইসিইউ, সিসিইউ বা পিআইসিইউতে। তবে এর মধ্যেও ব্যতিক্রম কিছু মানুষ আছে।
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? এ প্রশ্নের সহজ কোনো জবাব আমাদের কাছে নেই। যিনি আত্মহত্যা করেন, তিনিই কেবল বলতে পারবেন এর কারণ। তবে সে কারণ আর আমরা জানতে পারি না। জানার সুযোগও তেমন হয় না। পুলিশি তদন্তে, চিরকুটে বা লাইভে যতটুকু জানি, তা সমষ্টিগত কারণ না-ও হতে পারে। ব্যক্তির অন্তরে লুকানো সেই গোপন ব্যথা বা কথা কোনো কালেই জানা সম্ভব হয় না। সামাজিক অবহেলা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব-অভিমান, ব্যক্তিগত ক্ষোভ, কর্মজীবনে হতাশা, জীবনের প্রতি অনীহা, প্রিয়জনের প্রতারণা মানুষকে আত্মহননের দিকে ধাবিত করে। ফলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে, ঘরের মধ্যে বিষপানে, গলায় রশি বা ওড়না প্যাঁচিয়ে, মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে, উঁচু ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
ডাক্তার বা চিকিৎসকরা আত্মহত্যার চেষ্টাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ইতিমধ্যে বিশ্বে র অনেক দেশেই আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে একধরনের অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিতি সানজানা বলেছেন, আত্মহত্যার চেষ্টা করাটাই একটা ফৌজদারি অপরাধ। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে তার।’ তবু প্রতি বছর প্রায় দশ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে, তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী এবং যাদের বয়স পঁয়ত্রিশের নিচে, তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষদের আত্মহত্যার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ। পুরুষদের মধ্যে আবার তরুণদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়। পরীক্ষায় অকৃতকার্য, প্রেমে ব্যর্থ হলেও তারা আত্মহত্যা করে।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে গত এক বছরে আত্মহত্যা করেছেন ৫১৩ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি নারী শিক্ষার্থী। আরও উদ্বেগের বিষয়, যারা আত্মহত্যা করেছেন তাদের মধ্যে ৪৪ ভাগেরও বেশি স্কুল শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে যে ৫১৩ জন আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ২২৭ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ১৪০ জন কলেজ শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন এবং ৪৮ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী। আত্মহননকারীদের মধ্যে প্রায় ১০ ভাগ মানসিক সমস্যার কারণে এই পথ বেছে নিয়েছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা পুরুষের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলে আত্মহত্যার চিন্তা করার হার দ্বিগুণ। বেশিরভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক আছে। বিষণ্নতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে। জেনে রাখা ভালো, আত্মহত্যা সাধারণত দুই ধরনের- এক. পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা, দুই. হঠাৎ করে ফেলা। তাই চিকিৎসকরা আত্মহত্যার চেষ্টাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী আত্মহত্যার চলমান ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখন যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে আত্মহত্যা না করলেও তাদের অন্যান্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। পেশাজীবীদেরও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত। কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সমন্বিত কাজ করা প্রয়োজন।’
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মহত্যা মহাপাপ। তা জেনেও মানুষ এ পথে ধাবিত হয়। কিন্তু কেন? সেই জবাব খোঁজার আগে আমাদের উচিত কাছের মানুষের প্রতি নজর রাখা। হতাশাগ্রস্ত স্বজনের পাশে দাঁড়ানো। তাকে সাহস দেওয়া, স্বপ্ন দেখানো। জীবনের মূল্য বা বেঁচে থাকার মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানানো। আমরা জানি, প্রত্যেক প্রাণীর জন্য মৃত্যু অবধারিত। তারপরও অপমৃত্যু কখনোই কাম্য নয়। কেননা আত্মহত্যা মোটেই ইতিবাচক নয়। যে হতাশা, অবাস্তব প্রত্যাশা, অযৌক্তিক চাহিদার চাপ, একাকিত্ব, চাওয়ার সঙ্গে পাওয়ার পার্থক্যের জন্য নিজেকে দায়ী ভাবা, আশাহীনতা এমন অনেক কারণেই মানুষ নিজেকে শেষ করে দিতে চাইছে। সেদিক বিবেচনা করে এখন সময় এসেছে সর্বস্তরের প্রতিটি বয়সের প্রত্যেক ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আলোচনা শুরু করার।
মনে রাখতে হবে, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। নয় বুদ্ধিমানের কাজও। বারবার হেরে গিয়েও উঠে দাঁড়ানোই বীরত্ব। হেরে মরে গিয়ে মুক্তি পাওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। কাপুরুষরা মরার আগেই মরে। কেননা তারা আত্মহত্যা করে। এমনকি জীবনভীতরাই আত্মহত্যা করে। তারা সুপুরুষ হতে পারে না। জীবনে যত জটিলতা ততই সমাধান- এ মন্ত্রে বিশ্বাসী হলে কেউ জীবনের ওপর আস্থা হারাবে না। সব ধর্মেই আত্মহত্যা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধৈর্য ধারণের মধ্য দিয়ে বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে ওঠার মন্ত্র শেখানো হয়েছে। তাই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকেও সচেতন হতে হবে। পরিবারের কোনো সদস্য হতাশায় ভুগতে থাকলে তাকে সাপোর্ট দিতে হবে। সমাজের কেউ ডিপ্রেশনে থাকলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রকে নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

ধর্মীয় দৃষ্টিতে মহাপাপ হোক কিংবা মানবিক দৃষ্টিতে অপরাধ হোক- আত্মহত্যা কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আত্মহত্যা একধরনের মানসিক সমস্যা। এই মানসিক সমস্যাকে সমূলে বিনষ্ট করতে হবে। তাই তার মানসিক উন্নতির জন্য যথাযথ চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং জরুরি। পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের অন্তরে শুভ বোধ আসুক। চেতনা আসুক। আত্মহত্যার বদলে আত্মচেষ্টা জাগ্রত হোক।  আর একটি ফুলও যেন অকালে ঝরে না যায় বরং ফুল ফুটুক আপন সৌন্দর্যে- এ প্রত্যাশা সবার। ভালো থাকুক সবার প্রিয়জন।
জনপ্রিয়

হাঁসের মৃত্যুহার কমাতে বাকৃবির ডাক প্লেগ ভ্যাকসিন সিড, প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের নিকট হস্তান্তর

আত্মহত্যা নয়, আত্মচেষ্টা জাগ্রত হোক

প্রকাশিত ১১:০৩:৪৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে/ মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই’ কবির কথাটি আমাদের সবারই আরাধনা। কেই-বা অকারণে অকাতরে মরতে চায়? বাঁচার জন্য মানুষের সে কী আহাজারি; তা হাসপাতালে গেলেই বোঝা যায়। একটি দিন বা একটি ঘণ্টা বাঁচার জন্য লাখ লাখ টাকা ঢেলে দিচ্ছে আইসিইউ, সিসিইউ বা পিআইসিইউতে। তবে এর মধ্যেও ব্যতিক্রম কিছু মানুষ আছে।
মানুষ কেন আত্মহত্যা করে? এ প্রশ্নের সহজ কোনো জবাব আমাদের কাছে নেই। যিনি আত্মহত্যা করেন, তিনিই কেবল বলতে পারবেন এর কারণ। তবে সে কারণ আর আমরা জানতে পারি না। জানার সুযোগও তেমন হয় না। পুলিশি তদন্তে, চিরকুটে বা লাইভে যতটুকু জানি, তা সমষ্টিগত কারণ না-ও হতে পারে। ব্যক্তির অন্তরে লুকানো সেই গোপন ব্যথা বা কথা কোনো কালেই জানা সম্ভব হয় না। সামাজিক অবহেলা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব-অভিমান, ব্যক্তিগত ক্ষোভ, কর্মজীবনে হতাশা, জীবনের প্রতি অনীহা, প্রিয়জনের প্রতারণা মানুষকে আত্মহননের দিকে ধাবিত করে। ফলে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে, ঘরের মধ্যে বিষপানে, গলায় রশি বা ওড়না প্যাঁচিয়ে, মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে, উঁচু ভবন থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যার প্রবণতা লক্ষ করা যায়।
ডাক্তার বা চিকিৎসকরা আত্মহত্যার চেষ্টাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ইতিমধ্যে বিশ্বে র অনেক দেশেই আত্মহত্যার প্রচেষ্টাকে একধরনের অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিতি সানজানা বলেছেন, আত্মহত্যার চেষ্টা করাটাই একটা ফৌজদারি অপরাধ। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে এক বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে তার।’ তবু প্রতি বছর প্রায় দশ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতি বছর বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে, তার মধ্যে আত্মহত্যা ত্রয়োদশতম প্রধান কারণ। কিশোর-কিশোরী এবং যাদের বয়স পঁয়ত্রিশের নিচে, তাদের মৃত্যুর প্রধান কারণ হচ্ছে আত্মহত্যা। নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে আত্মহত্যার হার অনেক বেশি। পুরুষদের আত্মহত্যার প্রবণতা নারীদের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ। পুরুষদের মধ্যে আবার তরুণদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি লক্ষ করা যায়। পরীক্ষায় অকৃতকার্য, প্রেমে ব্যর্থ হলেও তারা আত্মহত্যা করে।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে গত এক বছরে আত্মহত্যা করেছেন ৫১৩ জন শিক্ষার্থী। যাদের মধ্যে ৬০ ভাগেরও বেশি নারী শিক্ষার্থী। আরও উদ্বেগের বিষয়, যারা আত্মহত্যা করেছেন তাদের মধ্যে ৪৪ ভাগেরও বেশি স্কুল শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে যে ৫১৩ জন আত্মহত্যা করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন ২২৭ জন স্কুল শিক্ষার্থী, ১৪০ জন কলেজ শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ৯৮ জন এবং ৪৮ জন মাদরাসা শিক্ষার্থী। আত্মহননকারীদের মধ্যে প্রায় ১০ ভাগ মানসিক সমস্যার কারণে এই পথ বেছে নিয়েছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা পুরুষের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরাঞ্চলে আত্মহত্যার চিন্তা করার হার দ্বিগুণ। বেশিরভাগ আত্মহত্যার সঙ্গে মানসিক রোগের সম্পর্ক আছে। বিষণ্নতা, ব্যক্তিত্বের সমস্যা, সিজোফ্রেনিয়া, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, মাদকাসক্তি ইত্যাদি রোগের যথাযথ চিকিৎসা না করলে এবং সম্পর্কজনিত জটিলতা, ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে। জেনে রাখা ভালো, আত্মহত্যা সাধারণত দুই ধরনের- এক. পরিকল্পনা করে আত্মহত্যা, দুই. হঠাৎ করে ফেলা। তাই চিকিৎসকরা আত্মহত্যার চেষ্টাকে মানসিক অবসাদজনিত গুরুতর উপসর্গ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী আত্মহত্যার চলমান ভয়াবহতা সম্পর্কে বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীরা এখন যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তাতে আত্মহত্যা না করলেও তাদের অন্যান্য মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। পেশাজীবীদেরও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা উচিত। কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে সমন্বিত কাজ করা প্রয়োজন।’
ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মহত্যা মহাপাপ। তা জেনেও মানুষ এ পথে ধাবিত হয়। কিন্তু কেন? সেই জবাব খোঁজার আগে আমাদের উচিত কাছের মানুষের প্রতি নজর রাখা। হতাশাগ্রস্ত স্বজনের পাশে দাঁড়ানো। তাকে সাহস দেওয়া, স্বপ্ন দেখানো। জীবনের মূল্য বা বেঁচে থাকার মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানানো। আমরা জানি, প্রত্যেক প্রাণীর জন্য মৃত্যু অবধারিত। তারপরও অপমৃত্যু কখনোই কাম্য নয়। কেননা আত্মহত্যা মোটেই ইতিবাচক নয়। যে হতাশা, অবাস্তব প্রত্যাশা, অযৌক্তিক চাহিদার চাপ, একাকিত্ব, চাওয়ার সঙ্গে পাওয়ার পার্থক্যের জন্য নিজেকে দায়ী ভাবা, আশাহীনতা এমন অনেক কারণেই মানুষ নিজেকে শেষ করে দিতে চাইছে। সেদিক বিবেচনা করে এখন সময় এসেছে সর্বস্তরের প্রতিটি বয়সের প্রত্যেক ব্যক্তির মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে আলোচনা শুরু করার।
মনে রাখতে হবে, আত্মহত্যা কোনো সমাধান নয়। নয় বুদ্ধিমানের কাজও। বারবার হেরে গিয়েও উঠে দাঁড়ানোই বীরত্ব। হেরে মরে গিয়ে মুক্তি পাওয়ার মধ্যে কোনো বাহাদুরি নেই। কাপুরুষরা মরার আগেই মরে। কেননা তারা আত্মহত্যা করে। এমনকি জীবনভীতরাই আত্মহত্যা করে। তারা সুপুরুষ হতে পারে না। জীবনে যত জটিলতা ততই সমাধান- এ মন্ত্রে বিশ্বাসী হলে কেউ জীবনের ওপর আস্থা হারাবে না। সব ধর্মেই আত্মহত্যা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধৈর্য ধারণের মধ্য দিয়ে বাধা-বিপত্তি কাটিয়ে ওঠার মন্ত্র শেখানো হয়েছে। তাই পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকেও সচেতন হতে হবে। পরিবারের কোনো সদস্য হতাশায় ভুগতে থাকলে তাকে সাপোর্ট দিতে হবে। সমাজের কেউ ডিপ্রেশনে থাকলে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। রাষ্ট্রকে নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

ধর্মীয় দৃষ্টিতে মহাপাপ হোক কিংবা মানবিক দৃষ্টিতে অপরাধ হোক- আত্মহত্যা কখনোই সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। আত্মহত্যা একধরনের মানসিক সমস্যা। এই মানসিক সমস্যাকে সমূলে বিনষ্ট করতে হবে। তাই তার মানসিক উন্নতির জন্য যথাযথ চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং জরুরি। পাশাপাশি প্রতিটি মানুষের অন্তরে শুভ বোধ আসুক। চেতনা আসুক। আত্মহত্যার বদলে আত্মচেষ্টা জাগ্রত হোক।  আর একটি ফুলও যেন অকালে ঝরে না যায় বরং ফুল ফুটুক আপন সৌন্দর্যে- এ প্রত্যাশা সবার। ভালো থাকুক সবার প্রিয়জন।
সময়ের আলো তে প্রকাশিত