খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় যখন নতুন ভবন ও উন্নত সুযোগ-সুবিধায় আধুনিক উচ্চশিক্ষার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, তখনই এর শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত ডরমেটরি যেন সময়ের অনেক পেছনে পড়ে থাকা এক অবহেলিত অধ্যায়। ফাটল ধরা ছাদ, চুইয়ে পড়া পানি আর বিদ্যুৎবিহীন গরম কক্ষেই শুরু ও শেষ হয় এখানে বসবাসরত শিক্ষকদের প্রতিদিন।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে, লেকপাড় ঘেঁষে অবস্থিত শিক্ষক ডরমেটরিটি বর্তমানে মূল ক্যাম্পাসের আধুনিকতার সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রথমদিকে এটি অপরাজিতা হলের সংযুক্ত অংশ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। পরে কিছুদিন পরিত্যক্ত থাকার পর, ব্যাচেলর শিক্ষকদের জন্য এটিকে আবাসন হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। নির্ধারিত আবেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডরমেটরিতে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দিয়েছে, ছাদ থেকে পানি পড়ে, বাথরুমে স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, মিটারজনিত সমস্যা এবং রয়েছে মশা ও সাপের উপদ্রব।
চারু ও কারুকলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষিকা শাপলা সিংহ বলেন, “সম্পূর্ণ অব্যবস্থাপনার কারণে আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অল্প বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটুপানি জমে যায়। ছাদ দিয়ে পানি পড়ে, পানীয় জলের কোনো ব্যবস্থাও নেই।”
তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, “কয়েকবার লিখিত অভিযোগ জানানো হলেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বক্তব্য, সংস্কারের জন্য ডরমেটরি খালি করতে বলা হলেও, শিক্ষকেরা দাবি করেন— সংস্কারের সময় তাদের থাকার ব্যবস্থা বিশ্ববিদ্যালয়কেই করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রেজিস্টার এস এম মাহবুবুর রহমান বলেন, “প্রধান প্রকৌশলী ডরমেটরির সংস্কারের ব্যাপারে শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে বিকল্প বাসস্থানের প্রশ্নে প্রশাসন সংকটে পড়ে।”
অর্থ দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নাজিম উদ্দিন জানান, শিক্ষক ডরমেটরির জন্য আলাদা কোনো বাজেট অতীতে ছিল না। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য এবারই প্রথম ১ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়েছে। তিনি বলেন, “শিক্ষকরা ডরমেটরি খালি করলেই আমরা সংস্কারকাজ শুরু করতে পারবো।”
বর্তমানে ডরমেটরিতে ১২ জন পুরুষ শিক্ষক (এর মধ্যে একজন অধ্যাপক) ও ৫ জন নারী শিক্ষক অবস্থান করছেন। নানা অসুবিধা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে অবস্থানের কারণে এটি বিশেষ করে নারী শিক্ষকদের কাছে এখনো প্রথম পছন্দ।
তবে শিক্ষকরা একমত— দ্রুত সংস্কারই এই সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ। প্রশাসনের প্রতি তারা জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন।
