সারাদিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। কখনও প্রচন্ড তাপদাহ। এভাবে একসময় মেঘ, বৃষ্টি আর কাঠফাটা রোদের অবসান হয়। প্রকৃতি হেসে ওঠে প্রাণের সজীবতায়। ঝকঝকে নির্মল নীল আকাশের বুকে শুভ্র মেঘের দল ঘুরে বেড়ায় । মনে হয়, যেন আকাশের বুকে টুকরো টুকরো মেঘের আবরণকে ঢেকে রাখছে। নিচে বিস্তীর্ণ জলরাশিতে নীলাকাশের আবছা প্রতিচ্ছবি। নদীতে পালতোলা নৌকার পাশে মৃদু জলের ঢেউয়ে পাগলা হাওয়ার মাতামাতি। স্বচ্ছ, নির্মল এক ঋতুর নাম শরৎ। রঙ, রূপ ও স্নিগ্ধতা নিয়েই হাজির হয় শরৎকাল।
শরৎ মানেই অমাদের চোখে ভেসে ওঠে শুভ্র কাশফুল। নদীর ধারে মৃদু মন্দ বাতাসে দোল খায় সাদা কাশফুল, বক আর পাখ-পাখালির দল। মহা কলরবে ডানা মেলে আকাশের নীল প্রান্ত ছুঁয়ে মালার মতো উড়ে চলে।
নদীর কিনারায় অথবা শহরের এক কোনে জেগে ওঠে কাশফুল। প্রিয় মানুষের সান্ন্যিধ্যে অথবা বন্ধুদের সাথে দল বেঁধে একান্তে কিছুটা সময় কাটিয়ে আসে কাশবনে। ছেলেরা সাদা পাঞ্জাবী আর মেয়েরা লাল পাড়ের সাদা শাড়ি, হাতে এক গুচ্ছ কাঁচের চুড়ি আর আলতা পায়ে বরণ করে নেয় এ্ই শরতকে।
রাতে চোখে পড়ে এক অদ্ভূত সৌন্দরয। মোহনীয় চাঁদনী রাত, মায়াবী পরিবেশ, আঁধারের বুক চিরে উড়ে বেড়ানো জোনাকী, চারদিকে সজীব গাছপালার ওপর বয়ে যাওয়া মৃদুমন্দ বায়ু, কামিনী, শিউলী, হাসনাহেনা, দোলনচাঁপা, বেলীসহ নাম না জানা নানান জাতের ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করে চারপাশ। এর্ই মাঝে কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি চারিদিকে এক ধরনের অদ্ভূত প্রশান্তি ছড়িয়ে দেয়। দিগন্তজুড়ে আকাশের এক কোনে জেগে ওঠে রংধনু। এমন দৃশ্য শুধু শরতে্ই দেখা যায়।
দু’চোখে যেদিকে যায় সেদিকেই দেখা মিলবে শুভ্র কাশফুল। ইটকাঠের এই নগরীতে এমন জায়গা হাতে গুনা দু-একটা। এরমধ্যে দিয়াবাড়ি একটি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের উত্তরা তৃতীয় পর্যায়ের সম্প্রসারিত প্রকল্পের অংশ এই দিয়াবাড়ি। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার নিয়ে অনেকেই আসে এই কাশবনে। কেউ বসে গল্প করে। কেউবা ফুলের সাথে ছবি তুলে। দুপুরের রোদ যখনই কমতে থাকে তখনই জমজমাট হয়ে ওঠে দিয়াবাড়ি এলাকা।
এই প্রকল্পে বালুমাটি ফেলে সমতল করায় বিশাল মাঠের মতো খোলা জায়গাটি এখন শরতের শুভ্র কাশফুলে এক মায়াবী রূপ ধারণ করেছে। কাশবনের ভেতর দিয়েই হেঁটে চলা যায় অনেকটা পথ। যান্ত্রিক পরিবেশ থেকে প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসা নগরবাসীর কাছে এখন অন্যরকম ভালো লাগার জায়গা হয়ে উঠেছে দিয়াবাড়ি। বিকেলে পুরো এলাকা গ্রামীণ মেলায় রূপ নেয়। এক দিকে নাগরদোলা। অন্য দিকে মজাদার রকমারি খাবারের পসরা। রাস্তার দুপাশে সারি সারি ফুচকা চটপটির দোকান। লেকের পাড়ে গড়ে উঠেছে বোট হাউজ। সারি দিয়ে বাঁধা প্যাডেল বোট (পায়ে চালিত নৌকা)। ঘণ্টা ভিত্তিতে ভাড়া করে ঘোরার সুযোগ রয়েছে। মজার বিষয় হলো, শুধু উত্তরাবাসী না বরং মিরপুর থেকেও খুব কম সময়ে সপরিবারে ঘুরতে আসে অনেকে।
দিয়াবাড়ির ভেতরটা বেশ নিরিবিলি। সেখানে হাঁটতে হাঁটতেই কথা হয় মেহনাজ আক্তারের সাথে। পেশায় তিনি একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। জানালেন, ছোটবেলায় গ্রামের বাড়িতে নদীর ধারে কাশফুলের এমন সৌন্দর্য দেখেছেন। ব্যস্ততার কারণে সন্তানদের নিয়ে গ্রামে যাওয়া হয়না। বছরে দু’একবার যাওয়া হয় কিন্তু তখন আর কাশফুল থাকে না। তাই সপরিবারে এখানে ঘুরতে আসা। সময় পেলেই তিনি বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে বের হন। এবার এসেছেন শরতের স্নিগ্ধতাকে বরণ করতে।





















