দেশি-বিদেশি দেড় শতাধিক চিকিৎসককে নিয়ে তিন দিনব্যাপী প্লাস্টিক সার্জারি ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশন (স্তন পুনঃস্থাপন) কার্যক্রম শুরুসহ প্লাস্টিক সার্জারির মানোন্নয়নের লক্ষ্যে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) থেকে সোমবার (২৮ অক্টোবর) পর্যন্ত রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়।
শেষ দিনের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর। এ সময় তিনি বলেন, টিমওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। এতে ভুল-ত্রুটি মুক্তভাবে কাজ করা যায়। সেইসঙ্গে আমাদের স্বাস্থ্যখাতকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। দেশের অনেক সার্জন বিদেশেও প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। তাদের মেধা দেশের কাজে আসছে। সবাই মিলে কাজ করলে দেশের স্বাস্থ্যখাত এগিয়ে যাবে। চিকিৎসকদের দায়িত্ব জনগণের চিকিৎসা সেবা দেওয়া। আমাদের দেশে বিভিন্ন রকমের রোগী রয়েছে, অনেকেই সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই স্বাস্থ্যখাত উন্নত হবে।
বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল বলেন, দেশের ১৪-১৫ হাজার ব্রেস্ট ক্যানসার রোগী শনাক্ত হচ্ছে। অনেকেরই দেরিতে রোগ শনাক্ত হয়। রোগীরা যখন আসে তখন তাদের রোগটা ঝুঁকিপূর্ণ থাকে, যার কারণে মাঝে মাঝে অঙ্গও কেটে ফেলতে হয়। ফলে অনেক রোগী মাসনিক ট্রমায় ভোগেন। প্লাস্টিক সার্জারিতে ব্রেস্ট রিকনস্ট্রাকশন কীভাবে করা যায়, এটি এখনো বাংলাদেশে শুরু হয়নি। শুরু করার আগে যারা নিয়মিত এ অপারেশন করেন, তাদের কয়েকজন বিদেশ থেকে এসেছেন। তাদের স্কিলটা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। এতে আমাদেরও দক্ষতা অর্জন হবে। তারা চলে যাওয়ার পর আমরা দেশে এ কাজটা শুরু করব। সেই স্কিলটা ট্রান্সফার হচ্ছে এই ওয়ার্কশপের মাধ্যমে।
তিনি বলেন, এটি আয়োজন করছেন বাংলাদেশের প্রবাসী চিকিৎসকরা। করোনার সময় প্রবাসী চিকিৎসকরা একটি একাডেমিয়া তৈরি করেন, সেখান থেকে সহযোগিতা করছেন। তারা বিভিন্নভাবে দেশের চিকিৎসকদের দক্ষতা বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। যাতে আমরা আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে কাজ করতে পারি।
কর্মশালায় দেশের প্লাস্টিক সার্জন সবাইকে ইনভাইট করা হয়েছে। কয়েকজন বাদে প্রায় সবাই অংশগ্রহণ করেছেন। এর মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীদেরকে ভবিষ্যতে দেশেই যথাযথ চিকিৎসা দেওয়া যাবে বলে আশা করেন অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে চাকরি ক্ষেত্রে বা অন্যান্য জায়গায় নারী-পুরুষ সমানসংখ্যক কাজ করেন। এতে সবার মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসার কমন হয়ে যাচ্ছে। খাবারের সমস্যা, শারীরিক অ্যাক্টিভিটিস কম, স্বাস্থ্য যত্ন ঠিক মতো না নেওয়া সবমিলিয়ে এ রোগটা বেড়ে যাচ্ছে।
তরুণ চিকিৎসকদের শেখার আগ্রহের কথা জানিয়ে অধ্যাপক ডা. রায়হানা আউয়াল বলেন, এ চিকিৎসা পদ্ধতি শিখতে তরুণ চিকিৎসকদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে এবং তারা আগ্রহ সহকারে শিখছেনও। ওয়ার্কশপে তরুণ চিকিৎসকরা বিদেশি বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন প্রশ্ন করছেন, তাদের জানার পরিধিও বাড়ছে। যেখানে তাদের মনে হচ্ছে, এটা কিভাবে হলো, কেন হলো, প্রশ্ন করার মাধ্যমে শিখে নিচ্ছেন তরুণ চিকিৎসকরা।
